যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও মিসরকে অস্ত্র সহায়তা অব্যাহত রেখে তাদের প্রায় সব বৈদেশিক সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বের সবচেয়ে বড় দাতা দেশ হিসেবে পরিচিত, তাদের সব ধরনের বিদেশি সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে গতকাল শুক্রবার। তবে জরুরি খাদ্য সহায়তা এবং ইসরায়েল ও মিসরের সামরিক সহায়তা এই স্থগিতাদেশের আওতার বাইরে থাকবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও একটি অভ্যন্তরীণ নথি যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এবং কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছেন। ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের সময় ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অংশ হিসেবে বৈদেশিক সহায়তায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
ফাঁস হওয়া নথিতে বলা হয়েছে, “যতক্ষণ না কোনো নতুন বা বিদ্যমান সহায়তা কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে পর্যালোচনা এবং অনুমোদিত হচ্ছে, ততক্ষণ এর অধীনে অর্থ বরাদ্দ স্থগিত থাকবে।”
এই নির্দেশ উন্নয়ন সহায়তা থেকে সামরিক সহায়তা পর্যন্ত সব ধরনের কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এতে ইউক্রেনও ভুক্তভোগী হতে পারে, যেখানে সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তার অংশ হিসেবে কয়েকশ কোটি ডলারের সামরিক সাহায্য দিয়েছেন।
এই নির্দেশ আরও ইঙ্গিত দেয় যে এইডস প্রতিরোধে প্রেসিডেন্টের জরুরি পরিকল্পনা (PEPFAR)-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর তহবিলও কয়েক মাসের জন্য বন্ধ থাকতে পারে। এই কর্মসূচি মূলত উন্নয়নশীল দেশ, বিশেষত আফ্রিকায়, এইডসের চিকিৎসার জন্য ওষুধ কেনার কাজে ব্যবহৃত হয়। ২০০৩ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এটি চালু করেছিলেন এবং এর মাধ্যমে প্রায় ২৬ মিলিয়ন মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথি অনুযায়ী, ইসরায়েল এবং মিসরের সামরিক সহায়তা এই নির্দেশের আওতার বাইরে থাকবে। গাজা সংঘাত শুরুর পর ইসরায়েলের অস্ত্র সহায়তা বৃদ্ধি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, আর ১৯৭৯ সালের শান্তিচুক্তির পর থেকে মিসর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা তহবিল পেয়ে আসছে।
জরুরি খাদ্য সহায়তাও এই নতুন নির্দেশনার বাইরে রাখা হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে সুদান ও সিরিয়ার মতো সংকটাপন্ন দেশগুলোতে খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
ডেমোক্রেটিক পার্টির আইনপ্রণেতারা বলছেন, PEPFAR-এর আওতায় ওষুধ সহায়তার ওপর ২০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ নির্ভরশীল। একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ কর্মসূচির ওপর নির্ভরশীল প্রায় ৬৩ মিলিয়ন মানুষ।
নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ৮৫ দিনের মধ্যে সব বৈদেশিক সহায়তা অভ্যন্তরীণভাবে পর্যালোচনা করা হবে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (OECD) তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ৬৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে।
গত সোমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর, ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য বৈদেশিক সহায়তা স্থগিত করে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। তবে এই আদেশ কীভাবে কার্যকর হবে, তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।
আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তার দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে সরে গেছেন ট্রাম্প। অক্সফামের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি অ্যাবি ম্যাক্সম্যান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজেটের মাত্র ১ শতাংশ মানবিক ও উন্নয়ন সহায়তায় ব্যয় হয়, যা লাখো মানুষের জীবন বাঁচাতে, রোগ প্রতিরোধে, শিশুশিক্ষায় এবং দারিদ্র্য কমাতে ভূমিকা রাখে। তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দেওয়া সংকটাপন্ন শিশু ও পরিবারের জন্য জীবন-মৃত্যুর বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
আপনার মতামত লিখুন