দুদককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান করার সুপারিশসহ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৫:১৬ অপরাহ্ণ
দুদককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান করার সুপারিশসহ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ

দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর, সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দুদক সংস্কার কমিশন পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেশ করেছে। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। গত ১৫ জানুয়ারি সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন কমিটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৪৭ পাতার এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।

প্রতিবেদনে সাতটি অধ্যায়ে মোট ৪৭টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বিতর্কিত ধারা বাতিল, দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন, ন্যায়পাল গঠন, দুদকের আইনি কাঠামো সংস্কার, কমিশনের পরিধি বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি প্রতিরোধে টাস্কফোর্স গঠনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

প্রথম সুপারিশে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র এমন ব্যবস্থা করবে যাতে কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারে এবং অনুপার্জিত আয় ভোগের সুযোগ না পায়। দ্বিতীয় সুপারিশ অনুযায়ী, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের পরিবর্তে দুর্নীতিবিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন ও ন্যায়পাল পদ সৃষ্টি করে তার মাধ্যমে এ কৌশলপত্র বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বৈধ উৎসবিহীন আয়কে স্বীকৃতি দেওয়ার যে কোনো রাষ্ট্রীয় চর্চা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক ও নির্বাচনি অর্থায়নে স্বচ্ছতা আনতে নির্বাচনি আইনে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া দুদকের অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে তদন্ত-পূর্ব আবশ্যিক অনুসন্ধান বাতিল করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সংস্কার কমিশন তিন সদস্যের পরিবর্তে পাঁচ সদস্যের দুদক কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে, যেখানে একজন নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশনের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে কমিয়ে চার বছর করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। কমিশন সদস্য হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে দুদকের সচিব, মহাপরিচালক ও পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক ও উন্মুক্ত প্রক্রিয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। দুদকের বিতর্কিত চাকরি বিধি সংশোধন, স্বাধীন প্রসিকিউশন টিম গঠন, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের পূর্বানুমতি বাতিল, ৩৬ জেলার পরিবর্তে প্রতিটি জেলায় দুদকের কার্যালয় স্থাপন ও বিশেষ জজ আদালত প্রতিষ্ঠার কথাও বলা হয়েছে।

সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান জানিয়েছেন, তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন এবং অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়গুলো পর্যালোচনা করছে। এখন দেখার বিষয়, এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো কিভাবে বাস্তবায়ন করা হয় এবং দুদক কতটা কার্যকর হয়ে ওঠে।