প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন গ্রেড বাড়ানো ও বিদ্যালয়গুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করার প্রস্তাব।

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৪:৫২ অপরাহ্ণ
প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন গ্রেড বাড়ানো ও বিদ্যালয়গুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করার প্রস্তাব।

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন গ্রেড এক ধাপ বাড়ানো এবং সহকারী শিক্ষকের পদ বিলুপ্ত করে নতুন পদ তৈরি করার সুপারিশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গঠিত পরামর্শক কমিটি। এছাড়া, কমিটি শিক্ষকদের পদোন্নতির সুযোগ বাড়ানোর সুপারিশও করেছে।

কমিটি প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নসহ শতাধিক সুপারিশ দিয়েছে, এর মধ্যে স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণি ও বিদ্যালয়ে সহায়তা ব্যবস্থা, ‘প্যারা শিক্ষক’ নিয়োগ এবং মৌলিক দক্ষতা জরিপের মাধ্যমে বিদ্যালয়গুলোকে লাল, হলুদ ও সবুজ শ্রেণিতে ভাগ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ রয়েছে। পরামর্শক কমিটি প্রাথমিক এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়ন ছাড়াও শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামোগত উন্নয়নে সুপারিশ করেছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গঠিত এই কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ। কমিটি তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তুলে দেয় এবং পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনে তাদের সুপারিশ তুলে ধরেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকার নীতিগতভাবে সহায়তা করবে, তবে কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নে অন্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে।

বর্তমানে সারা দেশে ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় চার লাখ শিক্ষক রয়েছেন, যেখানে প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১১তম এবং সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম। পরামর্শক কমিটি সহকারী শিক্ষক পদ বিলুপ্ত করে শুরুর পদ ‘শিক্ষক’ করার প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে বেতন গ্রেড হবে ১২তম।

কমিটি প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১১ থেকে ১০এ উন্নীত করার সুপারিশ করেছে, যা উচ্চ আদালতের সমর্থন পেয়েছে। পাশাপাশি, প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে।

বিদ্যালয়গুলোর মান যাচাইয়ের জন্য মৌলিক দক্ষতা জরিপের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করে লাল ও হলুদ বিদ্যালয়গুলোর জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, শিখন সময় বৃদ্ধি, মিড–ডে মিল চালু, এবং দরিদ্র শিশুদের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বাংলা ও গণিতের দক্ষতা অর্জন বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে, এবং প্রতিদিনের শিক্ষণ-শিখন সময় বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মাধ্যমে ঝরে পড়া শিশুদের জন্য কার্যকর মডেল তৈরি করারও সুপারিশ করা হয়েছে।

সুপারিশগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সরকারকে সময়নির্ধারণ করে কার্যকর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে পরামর্শক কমিটি।