বাংলাদেশজুড়ে ছড়িয়ে আছে আয়নাঘর, নিরূপণ করা যায়নি সংখ্যা: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আয়নাঘর শুধু কিছু নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সারা দেশজুড়ে এর অস্তিত্ব রয়েছে। তবে এখনো সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। কেউ বলছেন ৭০০, কেউ বলছেন ৮০০—কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা অজানা।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মী ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আয়নাঘর পরিদর্শনের পর তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেল এবং র্যাব-২ এর সিপিসি-৩ এর ভেতরের সেলগুলো পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি র্যাব সদর দপ্তরের টাস্কফোর্স ইন্টেলিজেন্স সেন্টারে যান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এখানে যা ঘটেছে, তা নৃশংসতার চূড়ান্ত উদাহরণ। প্রতিটি গল্প শুনলে অবিশ্বাস্য মনে হয়। এটা কি সত্যিই আমাদের সমাজ? আমরা কি এমন কিছু করতে পারি?” তিনি আরও বলেন, “গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বলে গত সরকার সর্বক্ষেত্রে ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’ প্রতিষ্ঠিত করেছিল, আয়নাঘর তারই একটি উদাহরণ।”
গুম হওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আয়নাঘর থেকে ফিরে আসেন পরিবারের কাছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গোপন স্থানে বন্দি করে রেখেছিল। সুইডেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজ প্রথম আয়নাঘরের অস্তিত্ব প্রকাশ করে। পরে অন্তর্বর্তী সরকারের তদন্ত কমিশন এই গোপন বন্দিশালাগুলো পরিদর্শনের উদ্যোগ নেয়।
প্রেস উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬০৫ জনকে গোপনে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। অন্য এক তথ্যে বলা হয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত ৩৪৪ ব্যক্তি গুমের শিকার হন, যাদের মধ্যে ৪০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় এবং ৬৬ জনকে সরকারি হেফাজতে পাওয়া যায়।
গুমের শিকার হয়ে ফিরে আসা অনেকে মৌনতা অবলম্বন করেছেন, তবে ধারণা করা হয়, তাদের বেশিরভাগই আয়নাঘরে বন্দি ছিলেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক মোবাশার হাসান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ কুমার রায়, মাইকেল চাকমা ও মীর আহমদ বিন কাসেমসহ অনেকে।
প্রধান উপদেষ্টার এই পরিদর্শন এবং তদন্ত কমিশনের কার্যক্রমের মাধ্যমে আয়নাঘর সম্পর্কিত ভয়াবহ সত্য উন্মোচিত হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আপনার মতামত লিখুন