জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: বাংলাদেশে বিপুল অর্থনৈতিক ও মানবিক ক্ষতি

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী চরম আবহাওয়া সংক্রান্ত ঘটনা বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘দ্য ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২৫’ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর বন্যা, খরা, ঝড় ও তাপপ্রবাহের কারণে প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হয় এবং ৬৩ লাখের বেশি মানুষ এর নেতিবাচক প্রভাবে পড়ে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২ সালে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২৯৯ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি। তবে ঝুঁকি প্রতিরোধ ও অভিযোজনমূলক কার্যকর ব্যবস্থার ফলে গত ৪০ বছরে ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ গুণের বেশি হ্রাস পেয়েছে। ১৯৭০ সালে ঘূর্ণিঝড়ে ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, যা ২০০৭ সালে কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৩৪ জনে।
২০২২ সালের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ভয়াবহ তাপপ্রবাহ ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে আঘাত হানে। পাকিস্তানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যার ফলে ৯০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯৯৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ৯,৪০০-এর বেশি চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনা ঘটেছে, যাতে প্রায় ৮ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং মোট ৪.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে।
চরম আবহাওয়ার শিকার দেশগুলোর তালিকায় চীন, ভারত ও ফিলিপাইন থাকলেও ডমিনিকা, হন্ডুরাস, মিয়ানমার ও ভানুয়াতু সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে। গত ৩০ বছরে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি দেশের মধ্যে তিনটি ইউরোপীয় দেশ—ইতালি, স্পেন ও গ্রিস।
বিশ্বজুড়ে বন্যা, খরা, ঝড় ও তাপপ্রবাহের সংখ্যা এবং তীব্রতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা অনেক অঞ্চলে ‘নতুন স্বাভাবিক পরিস্থিতি’ হয়ে উঠছে। জার্মানওয়াচের আন্তর্জাতিক জলবায়ু নীতির প্রধান লরা শ্যাফার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, জলবায়ু সংকট বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকি হয়ে উঠেছে, এবং এটি মোকাবেলায় সাহসী বহুপাক্ষিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো চরম আবহাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদি এসব দেশের তথ্য গ্লোবাল নর্থের মতো ব্যাপকভাবে সংগ্রহ করা হতো, তাহলে অর্থনৈতিক ও মানবিক ক্ষতির আরও ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ পেত। জলবায়ু পরিবর্তনের এই সংকট ভবিষ্যতে সংঘাত আরও বাড়াবে, সমাজকে অস্থিতিশীল করবে এবং বিশ্বব্যাপী মানব নিরাপত্তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
আপনার মতামত লিখুন