ভাষা আন্দোলন এবং সে সময়কার বিচার ব্যবস্থা

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে গবেষণা গত পাঁচ দশকে বিশেষত বদরুদ্দীন উমরের কাজের মাধ্যমে অগ্রসর হলেও, তা মূলত একরৈখিকভাবে সীমাবদ্ধ থেকেছে। উমরের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ “পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি” ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তী দুই খণ্ড ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয়। এই কাজ অনুসরণ করেই ১৯৯০ সালে “ভাষা আন্দোলনের আর্থ-সামাজিক পটভূমি” বইটি প্রকাশিত হয়। তবে পরবর্তী তিন দশকে ইতিহাসকারেরা ভাষা আন্দোলনের পর স্বাধীনতার রাজনীতি, ক্ষমতা পরিবর্তন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করেছেন, কিন্তু ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের বিচারকাঠামো বা পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থার ভূমিকা নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি।
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ভূমিকা কেবল আইনসভা বা নির্বাহী বিভাগের বিরুদ্ধে মত প্রকাশের মাধ্যমে নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরও পুরনো ঔপনিবেশিক কাঠামো অক্ষুণ্ণ থেকে গিয়েছিল, যা গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চাকে প্রভাবিত করেছিল। একে অপরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন একাধিক আইন কার্যকর ছিল, যেখানে একে অপরকে সমর্থন করতো না।
বিশেষ করে ভাষা আন্দোলনের সময় পাকিস্তানে সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তায় গণতান্ত্রিক অধিকার দমন করা হয়েছিল এবং বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ১৯৫২ সালে ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনাগুলির পরও আদালত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি, যা ক্ষমতার অধিকারীদের অবিচারকাঠামোর অংশ হিসেবে দাঁড়িয়ে ছিল।
এভাবে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও পাকিস্তানের বিচার কাঠামো দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন প্রয়োজন ছিল, কিন্তু ইতিহাসে সেগুলি তেমন আলোচিত হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন