বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর উত্থান: পরিবর্তনের আভাস নাকি বিভ্রান্তির নতুন মোড়?

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১:৫৪ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর উত্থান: পরিবর্তনের আভাস নাকি বিভ্রান্তির নতুন মোড়?

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একের পর এক নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ঘটছে। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে শিগগিরই একটি নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা আসতে পারে, যেখানে শীর্ষ ছয়টি পদ ইতোমধ্যেই নির্ধারিত হয়ে গেছে। একই সময়ে, কিছু সাবেক সেনা কর্মকর্তা আরেকটি রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা করছেন, যার নেতৃত্বে রয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শামীম কামাল। এই দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে, যেখানে মেজর জেনারেল (অব.) ইবনে ফজল সায়েখুজ্জামানকে সম্পাদক করা হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশে মোট ১৬টি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ১১টি দল গত বছর এবং চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে আরও পাঁচটি দল গঠিত হয়েছে। তবে নতুন গঠিত বেশিরভাগ দলের সাংগঠনিক ভিত্তি এখনো দুর্বল এবং রাজনৈতিক লক্ষ্য অস্পষ্ট। কিছু দল সীমিত সদস্যসংখ্যা নিয়েই তাদের কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছে, আবার অনেক দল এখনো তেমন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করতে পারেনি।

নতুন দলগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি’, যা ১৯ সেপ্টেম্বর আত্মপ্রকাশ করলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তুলতে পারেনি। সমতা পার্টি, আমজনতার দল ও বাংলাদেশ জন-অধিকার পার্টির মতো দলগুলোও তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম গোছাতে ব্যস্ত। এদের মধ্যে কেউ কেউ ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, আবার কেউ রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণের লক্ষ্য নিয়ে দল গঠন করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে সার্বভৌমত্ব আন্দোলন ও জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ। সার্বভৌমত্ব আন্দোলন গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর আত্মপ্রকাশ করে এবং তারা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ ১৬ ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশ করে এবং মুসলিম জাতীয়তাবাদী আদর্শকে সামনে রেখে বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় রয়েছে।

প্রথম আত্মপ্রকাশ করা নতুন রাজনৈতিক দল ছিল ‘নিউক্লিয়াস পার্টি অব বাংলাদেশ (এনপিবি)’, যা ২৩ আগস্ট ২০২৪ সালে গঠিত হয়। এরপর একের পর এক নতুন দল গঠনের প্রবণতা শুরু হয়। ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি, ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি, ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি, ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি এবং ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি আত্মপ্রকাশ করে।

চলতি বছরেও নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান অব্যাহত রয়েছে। ৪ জানুয়ারি দেশ জনতা পার্টি, ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শক্তি, এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি আত্মপ্রকাশ করেছে। এর বাইরে, ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ মুক্তির ডাক ৭১’ নামের একটি রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে, যা গোপনীয়তার মধ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে।

নতুন দলগুলোর এই উত্থান কি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে, নাকি এগুলো কেবল অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিফলন? এখনো অনেক দলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, কারণ তারা রাজনৈতিক মাঠে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে পারেনি। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট নতুন ধাঁচে রূপ নিচ্ছে, যা ভবিষ্যতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।