বৈশ্বিক স্বাধীনতার সূচকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি

বৈশ্বিক স্বাধীনতার সূচকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪০, যা ২০২৪ সালে বেড়ে ৪৫-এ পৌঁছেছে। এ উন্নতির ফলে বাংলাদেশ এ বছর স্বাধীনতা সূচকে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি অর্জনকারী চার দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। এ তালিকায় অন্য তিনটি দেশ হলো ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও সিরিয়া।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন-ভিত্তিক গণতন্ত্রপন্থী গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউসের প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বের ২০৮টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে ৬০টি দেশে রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতার অবনতি ঘটেছে, বিপরীতে মাত্র ৩৪টি দেশে এ ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। গত বছর সবচেয়ে বেশি স্কোর কমেছে এল সালভাদর, হাইতি, কুয়েত ও তিউনিসিয়ার।
ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদন অনুসারে, এ বছর দুটি দেশ নতুন করে ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেয়েছে—সেনেগাল ও ভুটান। সেনেগালে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ভোট পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও বিরোধীদের আন্দোলনের মুখে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং শেষ পর্যন্ত বিরোধীরাই জয়ী হন। অন্যদিকে, ভুটান প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পথে আরও দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।
বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও দেশ দুটি ‘স্বাধীন’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়নি, তবে ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে তাদের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছে।
বাংলাদেশে গত বছর ছাত্র ও সাধারণ জনগণের আন্দোলনের ফলে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। একইভাবে, গত বছরের ডিসেম্বরে সিরিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল–আসাদের পতন ঘটে এবং ইসলামপন্থী যোদ্ধারা তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। তিনি দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নেন।
ফ্রিডম হাউসের মতে, সরকার পতনের পর বাংলাদেশ ও সিরিয়ায় নাগরিক স্বাধীনতার মান দ্রুত উন্নত হয়েছে। তবে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ও গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য এখনো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।
শ্রীলঙ্কায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। তার বিজয়ের ফলে দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা দুই দলের রাজনৈতিক আধিপত্যের অবসান ঘটেছে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশ ও অঞ্চল মিলিয়ে তালিকায় সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয়েছে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে। ৩৮ স্কোর নিয়ে অঞ্চলটি এখন ‘আংশিক স্বাধীন’ হিসেবে স্বীকৃত। ২০১৯ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মুসলিম–অধ্যুষিত অঞ্চলটির বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেছিল। তবে ২০২৪ সালে সেখানে প্রথমবার বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যা স্বাধীনতার সূচকে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
তবে, ফ্রিডম হাউসের মতে, দেশ হিসেবে ভারতের অবনতি হয়েছে। ২০২৪ সালে ভারতের স্কোর ৬৩-এ নেমে এসেছে, যা ২০২৩ সালে ছিল ৬৬। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিচার বিভাগে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাকে এই অবনমনের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২৪ সালে স্বাধীনতার সূচকে সবচেয়ে বেশি অবনমন হয়েছে এল সালভাদর, হাইতি, কুয়েত ও তিউনিসিয়ায়। এর মধ্যে এল সালভাদর (৪৭) ও তিউনিসিয়া (৪৪) ‘আংশিক স্বাধীন’ তালিকায় রয়েছে, আর হাইতি (২৪) ও কুয়েত (৩১) ‘স্বাধীন নয়’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে।
প্রতিবেদনের সহ-লেখক ইয়ানা গোরোখোভস্কায়া বলেন, টানা ১৯ বছর ধরে বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতার মানের অবনতি হচ্ছে। তবে ২০২৪ সাল ছিল বিশেষভাবে অস্থিতিশীল, কারণ গত বছর একাধিক দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও সিরিয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে নাগরিক স্বাধীনতায় উন্নতি হয়েছে, তবে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ও গণতন্ত্র সুসংহত করতে তাদের আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক অধিকার অনেকটা প্রতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। এগুলো ধ্বংস করা সহজ হলেও পুনর্গঠন করা অত্যন্ত কঠিন।
আপনার মতামত লিখুন