২ মার্চ: বাংলাদেশের স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনের ঐতিহাসিক মুহূর্ত

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: রবিবার, ২ মার্চ, ২০২৫, ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ
২ মার্চ: বাংলাদেশের স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনের ঐতিহাসিক মুহূর্ত

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ, অন্যায়, অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ২ মার্চ তৎকালীন ডাকসু নেতাদের উদ্যোগে সাধারণ জনগণ সাড়া দেয়। সেদিনের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়েই বাঙালি ছাত্র-জনতা স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয় এবং স্বাধীনতার পথে অগ্রসর হয়। সবুজ জমিনের ওপর লাল বৃত্তের মাঝে সোনালি মানচিত্র খচিত সেই পতাকা প্রথম উত্তোলন করেছিলেন ডাকসুর সহসভাপতি আ স ম আবদুর রব। এই পতাকা উত্তোলনই স্বাধীন বাংলাদেশের অবশ্যম্ভাবী বাস্তবতা ঘোষণা করেছিল।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা বুঝতে পেরেছিল যে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ছয় দফা বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসে আলোচনার পর জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করার আশ্বাস দিলেও, পরে পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে গোপন বৈঠকে মিলিত হন জুলফিকার আলী ভুট্টো ও সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে।

জানুয়ারির শেষ দিকে ভুট্টো ঢাকায় এসে ছয় দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র তৈরির প্রস্তাব দেন, তবে তিনি আরও আলোচনার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। ৩ মার্চ ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করলেও, ভুট্টো আওয়ামী লীগের দাবি মেনে না নিলে অধিবেশনে যোগ দেবেন না বলে ঘোষণা দেন। এর মাধ্যমে পাকিস্তানি শাসকরা নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। পহেলা মার্চ দুপুর ১টা ৫ মিনিটে ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন, যার পরপরই দেশজুড়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ শুরু হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ তখন সরব হয়ে ওঠে। ২ মার্চ সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের বটতলায় ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন ছাত্রলীগ নেতা শেখ জাহিদ হোসেন একটি বাঁশের মাথায় পতাকা বেঁধে মঞ্চে আনেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ডাকসুর জিএস আব্দুল কুদ্দুস মাখন, শাহজাহান সিরাজসহ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। তারা স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন এবং ঘোষণা করেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তারা যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।

সমাবেশ শেষে বিশাল মিছিল বের হয়ে বায়তুল মোকাররম পর্যন্ত গিয়েছিল। একই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সচিবালয়ে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। রাতেই পাকিস্তান সরকার কারফিউ জারি করে, কিন্তু উত্তাল ছাত্র ও জনতা কারফিউ উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসে। ‘কারফিউ মানি না’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ স্লোগানে শহর প্রকম্পিত হয়। সেনাবাহিনী মিছিল লক্ষ্য করে গুলি চালায়, তবু জনগণের প্রতিরোধের আগুন নেভেনি।

এর ধারাবাহিকতায় ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ছাত্রনেতা শাহজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন। ২ মার্চের পতাকা উত্তোলন ও ৩ মার্চের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার আন্দোলন অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে, যা পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়।