আরাকান আর্মির হাতে জেলেদের অপহরণ ও মুক্তিপণের ভয়াবহ চিত্র

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৪ মার্চ, ২০২৫, ১০:৫৮ অপরাহ্ণ
আরাকান আর্মির হাতে জেলেদের অপহরণ ও মুক্তিপণের ভয়াবহ চিত্র

মিয়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে জেলেদের অপহরণ করছে এবং মুক্তিপণ আদায় করছে। কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদীর বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে তারা মৎস্যজীবীদের ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাদের রাখাইন রাজ্যের প্রায় সাত-আট কিলোমিটার ভেতরে একটি ক্যাম্পে বন্দি রাখা হয়। বন্দিদের কাছ থেকে তাদের পরিবার বা নৌকার মালিকের মোবাইল নম্বর চাওয়া হয়। নম্বর দিতে অস্বীকার করলে চালানো হয় শারীরিক নির্যাতন। নম্বর সংগ্রহের পর অপহরণকারীরা নিজেই ফোন করে ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

জেলেদের পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য আরাকান আর্মির কাছে বাংলাদেশি সিমকার্ডসংবলিত মোবাইল ফোন রয়েছে, যার মাধ্যমে তারা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে। মুক্তিপণ পাওয়ার পর অপহৃতদের নাফ নদীর বাংলাদেশ জলসীমার কাছে এনে আরেকটি নৌকায় তুলে ছেড়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি ১৭ দিন বন্দি থাকার পর আরাকান আর্মির কাছ থেকে মুক্তি পাওয়া ২৯ জন জেলে তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।

৩৫ বছর বয়সী মৎস্যজীবী মাহমুদুল হাসান জানান, ১১ ফেব্রুয়ারি তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে তাদের মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী একটি বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত ক্যাম্পে নেওয়া হয় এবং কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়। ৪৮ ঘণ্টা ধরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয়, যেখানে মাত্র একটি বালতি মূত্র ত্যাগের জন্য দেওয়া হয়েছিল। খাবার হিসেবে দিনে এক মুঠো ভাত ও সেদ্ধ কলার কাণ্ড দেওয়া হতো। কখনো কখনো পচা মসুর ডাল দেওয়া হতো, যাতে পোকামাকড় পাওয়া যেত। পানির অবস্থাও ছিল শোচনীয়, যেখানে সিগারেটের ছাই পর্যন্ত পাওয়া গেছে।

২০ বছর ধরে মৎস্যজীবী হিসেবে কাজ করা মো. শফিউল্লাহ জানান, প্রতিদিন দুই-তিনজন করে মৎস্যজীবীকে ধরে নিয়ে আসা হতো এবং মুক্তিপণ পেলে ছেড়ে দেওয়া হতো। বন্দিদের ওপর চালানো হতো ভয়াবহ নির্যাতন, যা ভিডিও করে তাদের পরিবারের কাছে পাঠানো হতো, যেন মুক্তিপণ দ্রুত পরিশোধ করা হয়। মুক্তিপণের লেনদেন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হতো, যা বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করত।

২১ বছর বয়সী আব্দুর রহমান জানান, বন্দিত্বের সময় কিছু বাংলাভাষী আরাকান আর্মির সদস্যদের মধ্যে আলাপচারিতায় তিনি জানতে পারেন, এর আগেও তারা মুক্তিপণ আদায়ের মাধ্যমে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে।

এ প্রসঙ্গে বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান জানিয়েছেন, আরাকান আর্মি দাবি করছে যে, তারা কেবল তখনই মৎস্যজীবীদের ধরে, যখন তাদের নৌকা ভুলবশত তাদের জলসীমায় প্রবেশ করে। তবে বিজিবি বিষয়টি গুরুত্বসহকারে পর্যবেক্ষণ করছে এবং আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আটক জেলেদের মুক্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।