বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কড়াকড়ি থাকার পরেও নারী পাচারের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।

যতদূর চোখ যায়, শুধু সবুজের সমুদ্র। গাছপালা ও ফসলের ক্ষেতের পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ইছামতী নদী, যার অপর প্রান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেখাচ্ছে ভারতের সীমান্ত। যশোরের শার্শা উপজেলার দৌলতপুর সীমান্তে দাঁড়িয়ে, মৃদু বাতাসে চোখে লাগে এই প্রাকৃতিক দৃশ্য, যা শান্তি ও প্রশান্তি এনে দেয়। এমন এক দৃশ্যের মাঝে বাস করছেন ২২ বছর বয়সী ওই তরুণী। ২২ ফেব্রুয়ারি যশোর শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সন্তান কোলে নিয়ে তিনি এই প্রতিবেদকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। দুই বছর আগে সীমান্ত দিয়ে পাচারের শিকার হয়ে তিনি ভারতে চলে যান। পরে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি (বিএনডব্লিউএলএ) তাকে উদ্ধার করে পুনর্বাসন করে। তিনি জানান, কাজের প্রলোভনে তাঁকে ভারতে নেওয়া হয়েছিল, যেখানে তাকে যৌনপল্লিতে বিক্রি করা হয়। দুই বছর পর ভারতীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে এবং বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেয়। সেখানে তিনি আরও তিনজন বাংলাদেশি মেয়েকে দেখেছিলেন।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে নারী ও শিশু পাচারের প্রবণতা থেমে নেই। রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন পরও সীমান্তে কড়াকড়ি বেড়েছে, তবে পাচারকারীরা ফাঁকফোকর খুঁজে বের করছে। জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার সংগঠন জানায়, আগস্ট থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে ১০ নারী ও কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের ভারতীয় যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
মানব পাচারের বিরুদ্ধে কাজ করতে গিয়ে জানা গেছে যে, অধিকাংশ পাচারের শিকার হচ্ছেন নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো থেকে। কিছু ক্ষেত্রে, প্রেমের ফাঁদেও নারী পাচারের ঘটনা ঘটছে। যেমন, ঢাকার এক ক্যানসার আক্রান্ত মেয়েকে ভারতে চিকিৎসার কথা বলে পাচার করা হয়েছিল, যেখানে পরে তাকে যৌনপল্লিতে বিক্রি করা হয়।
এই পাচারের ঘটনায়, পাচারকারীরা সীমান্ত পার করতে জনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নিতেও শুরু করেছে। বিজিবি সীমান্তে কড়াকড়ি রাখলেও কিছু সীমান্ত দিয়ে পাচার অব্যাহত রয়েছে।
একটি সূত্র অনুযায়ী, গত ১৪ মাসে ১৮৬ নারী ও শিশু বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে সরকারি পর্যায়ে এই পাচারের সংখ্যা সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় না।
নির্যাতনের শিকার এই নারীরা নিরলসভাবে সামনে এগিয়ে যেতে চাচ্ছেন, এবং আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই আরও জোরালো হয়ে উঠছে।
আপনার মতামত লিখুন