বাংলাদেশের পরিবর্তনের পথে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সাত মাসের অগ্রগতি

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিলে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে। এর পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক সংকটের মাঝেও তার নেতৃত্বে দেশ ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে এগোতে শুরু করে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা চলছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম তার এক পোস্টে ইউনূস সরকারের সাত মাসের কার্যক্রমের মূল্যায়ন করেছেন। তিনি বলেছেন, জনগণ সুযোগ পেলেই অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করে, কিন্তু সরকারের সাফল্যগুলো স্বীকার করা হয় না।
গত সাত মাসে অন্তর্বর্তী সরকার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ৬২ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ ১৮.৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ বিলিয়ন বেশি। দেশের রিজার্ভ বেড়ে ২১৪০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। রমজানে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।
হাসিনা ও তার পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৬৩৫ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। খাদ্যপণ্যে ভর্তুকি ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে সাধারণ জনগণ স্বস্তি পেয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে গত ২২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন মুদ্রাস্ফীতির হার রেকর্ড করা হয়েছে।
আইন ও বিচার ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন এসেছে। ধর্ষণের তদন্ত ১৫ দিনের মধ্যে শেষ করা এবং বিচার ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা ফিফা, আওয়ামী আমলে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির কারণে বাফুফের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, সেটি তুলে নেওয়া হয়েছে।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩২ বছরে উন্নীত করা হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে, যেখানে হাসিনার আমলে সিলেবাসে থাকা রাজনৈতিক প্রভাব ও পারিবারিক তোষামোদমূলক বিষয়গুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের এখন দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চার দিনের সফরে বাংলাদেশে এসে এক যুগান্তকারী ঘোষণা দিয়েছেন—আগামী বছর মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠিয়ে সেখানে তাদের সঙ্গে ইফতার করতে চান। এটি সরকারের কূটনৈতিক সাফল্যের একটি বড় দৃষ্টান্ত।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে, তা সহজ নয়। শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া অর্থনৈতিক ধ্বংসাবশেষ পুনর্গঠনে যে কোনো সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। ড. ইউনূস সেই কঠিন দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন।
তার নেতৃত্বে দেশ যে পথে এগোচ্ছে, তা জনগণের স্বার্থেই গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তী সরকারের এই সাফল্যকে স্বীকার করা যেমন জরুরি, তেমনই ভবিষ্যতের জন্য আরও সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। ড. ইউনূস যদি এই দায়িত্ব গ্রহণ না করতেন, তবে তার সমপর্যায়ের অন্য কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হতো। বাংলাদেশের জনগণ অবশ্যই তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন