ভাইবোন একসাথে জাতীয় হকি দলের খেলোয়াড়: রকি ও রাত্রী

হকি স্টেডিয়ামে ওমানগামী জাতীয় দলের অনুশীলন চলছিল। দুপুরের সময় রকি, আমিরুল, মিমো, সারোয়াররা এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে লং হিট করছিলেন। বলের প্রতিটি আঘাতে পুরো স্টেডিয়াম বাজছিল পটাশ পটাশ শব্দ। বাইরে বসে খেলা দেখছিলেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নারী হকি দলের খেলোয়াড়রা, তাঁদের মধ্যে ছিলেন কিশোরগঞ্জের মেয়ে ফারদিয়া আক্তার রাত্রী, যিনি চোখ রাখছিলেন বড় ভাই রকির দিকে।
রকি মনোযোগ দিয়ে অনুশীলন করছিলেন। হকি ফেডারেশনের সদস্য শহিদুল্লাহ দোলন এবং সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল হাসানরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। দোলন বললেন, “হকিতে এবারই প্রথম ভাইবোন জাতীয় দলের খেলোয়াড়। আগে ভাইভাই খেলেছে, কিন্তু ভাইবোন এটাই প্রথম।”
রকি এখন দেশের প্রতিভাবান খেলোয়াড়, জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন এবং অনূর্ধ্ব-২১ বিশ্বকাপ হকিতে প্রথমবার খেলার সুযোগ পেয়েছেন। ভাইবোন হিসেবে জাতীয় দলে খেলা নিয়ে গৌরবিত বোন রাত্রী বললেন, “খুব ভালো লাগে। আমরা ভাইবোন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চড়াতে পেরেছি। দেশের জন্য কিছু করতে চাই।”
রাত্রী আরও জানালেন, তাঁর পরিবারের অনেকেই খেলার সঙ্গে জড়িত। তাঁর ফুফি রোকেয়া পাঠান হ্যান্ডবল ও ভলিবল খেলতেন, বড় দুই বোন পিংকি হ্যান্ডবল এবং লিনা অ্যাথলেটিকসে জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ণপদক জয় করেছেন। রাত্রী বললেন, “লিনার হাজব্যান্ড, মানে আমার দুলাভাই রকিকে হকিতে এনেছে, আমিও এসেছি হকিতে।”
২০১৬ সালে কিশোরগঞ্জের আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াকালীন স্কুল হকি খেলতে শুরু করেন রাত্রী। ২০২৩ সালে ওমানে ফাইভ এ সাইড হকিতে অধিনায়ক হিসেবে খেলেন এবং উজবেকিস্তানকে ৭-২ গোলে পরাজিত করেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ২-০ গোলের জয়ে রাত্রী গোল করেন, যা তাঁর জন্য স্মরণীয় মুহূর্ত।
রকি মাঠে নামার আগে মাথায় ব্যান্ড পরেন এবং স্টাইল করে খেলতে পছন্দ করেন। গতকাল মাঠে দেখা গেল এক পায়ে লাল মোজা, অন্য পায়ে সবুজ মোজা। রাত্রী হাসতে হাসতে বললেন, “তাকিয়ে দেখেন, ওর চুলে বেণি করা হয়। আমি এটা করে দিই। সকালে অনুশীলন থাকলে রাতে বেণি করার দায়িত্বটা আমি নিয়ে থাকি।”
ভাই রকি সম্পর্কে রাত্রী বলেন, “ও খুব চুপচাপ, বাসায় চুপচাপ থাকে। কথা কম বলে।” এক পরিবারের ভাইবোনের হকি খেলা নিয়ে রাত্রী বলেন, “ভালো লাগে। আগে ভয় পেতাম, এখন আর ভয় লাগে না। এই খেলায় মেয়েদের আসা উচিত।”
এভাবে ভাইবোনের মধ্যে একে অপরের পাশে থেকে খেলার প্রতি ভালবাসা এবং দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার গর্ব ও দৃঢ় মনোভাব ফুটে উঠছে।
আপনার মতামত লিখুন