রমজানে ডিমের দাম কমায় খুশি ভোক্তা, বিপাকে খামারিরা

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫, ৪:৫৬ অপরাহ্ণ
রমজানে ডিমের দাম কমায় খুশি ভোক্তা, বিপাকে খামারিরা

এবারের রমজানে ডিমের দাম কমে যাওয়ায় সাধারণ ভোক্তারা স্বস্তি পেলেও পোলট্রি খামারিরা বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন। বর্তমানে ১০ টাকা ব্যয়ে উৎপাদিত প্রতিটি ডিম তারা মাত্র ৮ টাকা বা তারও কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন, ফলে প্রতিটি ডিমে ২ টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। তবে খুচরা পর্যায়ে দোকানিরা সেই ডিম ১০ টাকা বা তার বেশি দামে বিক্রি করছেন, যা খামারিদের জন্য আরও হতাশাজনক।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ডিমের সংকট ছিল এবং বন্যার কারণে অনেক খামার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দাম বেড়ে ১২ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। কিন্তু বর্তমানে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে গেছে। খামারিরা জানান, গত মৌসুমে ডিমের বাজার চড়া থাকায় লাভের আশায় অনেকে খামার সম্প্রসারণ করেছেন এবং বন্ধ থাকা খামারগুলোও পুনরায় চালু হয়েছে। এতে করে ডিমের উৎপাদন অনেক বেশি বেড়েছে, কিন্তু চাহিদা কম থাকায় দাম পড়ে গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজান মাসে ঐতিহ্যগতভাবেই ডিমের চাহিদা কম থাকে, কারণ ইফতারে খেজুর, ছোলা, হালিম ও জিলাপির মতো খাবার বেশি প্রাধান্য পায়। তার ওপর চলমান মূল্যস্ফীতির কারণে অনেকের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে, যা ডিমসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারেও প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া শীতকালে বাজারে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি সহজলভ্য থাকায় অনেকের জন্য ডিমের বিকল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে, ফলে চাহিদা আরও কমেছে।

নরসিংদীর শিবপুরের তরুণ পোলট্রি উদ্যোক্তা শাহ আলম জানিয়েছেন, তার খামারে ১২ হাজার লেয়ার মুরগি রয়েছে এবং তিনি ৮ টাকা ৫ পয়সায় প্রতি ডিম বিক্রি করেছেন, যদিও তার উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৩০ পয়সা। একইভাবে, আরেক খামারি ফারুখ মৃধা বলেন, “আমি আগে যে লাভ করেছি তা দিয়ে এখনো টিকে আছি, তবে দ্রুত দাম না বাড়লে এ ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে।”

পোলট্রি ব্যবসার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত তৌহিদুজ্জামান বলেন, গত দুই বছর ডিমের ভালো বাজারদর থাকায় বন্ধ খামারগুলো পুনরায় চালু হয়েছে এবং নতুন বিনিয়োগও বেড়েছে। ফলে দেশের লেয়ার খামারের সংখ্যা ও ডিমের উৎপাদন বেড়েছে, যা দাম কমার অন্যতম কারণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন জানান, ডিমের বাজারে দর নির্ভর করে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। যখন সরবরাহ বেশি হয়, তখন দাম কমে, আর চাহিদা বেশি হলে দাম বেড়ে যায়।

কাজী ফার্মস লিমিটেডের পরিচালক কাজী জাহিন হাসান বলেন, ঈদের আগে মুরগির মাংসের চাহিদা বাড়তে পারে, কারণ ছুটির সময়ে অনেকেই বেশি পরিমাণ মুরগি কিনে রাখেন। তবে ডিমের ক্ষেত্রে এখনো চাহিদা কম থাকায় খামারিদের জন্য সময়টা কঠিন হয়ে উঠেছে।

যদিও রমজানে ডিমের দাম কমায় সাধারণ ভোক্তারা উপকৃত হচ্ছেন, তবে খামারিরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। চাহিদা কমে যাওয়ায় উৎপাদিত ডিম বিক্রি করতেই তারা হিমশিম খাচ্ছেন। দীর্ঘমেয়াদে এ সমস্যা সমাধানে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজার নিয়ন্ত্রণ ও নীতিমালা নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।