ভূমিকম্পের পূর্বাভাস কেন প্রায়ই সঠিক হয় না

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৫, ১২:৫৮ অপরাহ্ণ
ভূমিকম্পের পূর্বাভাস কেন প্রায়ই সঠিক হয় না

ব্রেন্ট দিমিত্রাক নামের এক ব্যক্তি নিজেকে ভূমিকম্প পূর্বাভাসকারী হিসেবে পরিচয় দেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। গত বছরের অক্টোবর মাসে তিনি তাঁর অনুসারীদের সতর্ক করে বলেন যে ক্যালিফোর্নিয়ার ইউরেকা শহরের দক্ষিণে শিগগিরই ভূমিকম্প হতে পারে

দুই মাস পর, সত্যিই ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরাঞ্চলে ৭.৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে এবং সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। এর ফলে দিমিত্রাকের জনপ্রিয়তা আরও বাড়ে, এবং লোকজন তাঁর কাছে নতুন ভূমিকম্পের পূর্বাভাস জানতে চান।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্পের নির্ভুল পূর্বাভাস দেওয়া অত্যন্ত কঠিন। আবহাওয়ার পূর্বাভাস সাধারণত নির্ভুলভাবে দেওয়া গেলেও ভূমিকম্প কখন, কোথায় ঘটবে, তা আগেভাগে নির্ধারণ করা প্রায় অসম্ভব। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (USGS) গবেষক লুসি জোনস, যিনি তিন দশকের বেশি সময় ধরে ভূমিকম্প নিয়ে কাজ করেছেন, বলেন, মানুষ সব সময় জানতে চায়, ‘বড় ভূমিকম্প’ কখন ঘটবে, তবে এর সুনির্দিষ্ট সময় বলা সম্ভব নয়।

USGS-এর তথ্য অনুসারে, ক্যালিফোর্নিয়ার ইউরেকা অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ, কারণ এটি তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এই প্লেটগুলোর চলাচলের ফলে ভূগর্ভে প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয়, যা যখন মুক্ত হয়, তখন ভূমিকম্প হয়। ফলে দিমিত্রাকের ভবিষ্যদ্বাণী অনেকটাই অনুমানভিত্তিক ছিল।

ভূমিকম্প পূর্বাভাস নির্ভুল হতে হলে তিনটি বিষয় জানা জরুরি—ভূমিকম্পের সময়, উৎপত্তিস্থল ও মাত্রা। কিন্তু দিমিত্রাকের পূর্বাভাসের সময়সীমা বারবার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি কখনো বলেছেন, এটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের সময় ঘটবে, আবার কখনো বলেছেন, এটি ২০৩০ সালের মধ্যে ঘটবে।

তবে ভূমিকম্পের সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব না হলেও মানুষকে প্রস্তুত রাখা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার ‘দ্য গ্রেট শেক আউট’ নামে ভূমিকম্প মোকাবিলার মহড়া হয়, যেখানে মানুষ ভূমিকম্পকালীন নিরাপদ অবস্থান গ্রহণের অনুশীলন করে। এছাড়া, পশ্চিম উপকূলে ‘শেকঅ্যালার্ট’ নামে একটি ফোন সতর্কতা ব্যবস্থাও চালু রয়েছে, যা ভূমিকম্পের আগাম সংকেত দিতে পারে।

অতএব, যদিও বিজ্ঞান এখনো ভূমিকম্পের নির্ভুল পূর্বাভাস দিতে পারেনি, তবে সচেতনতা ও প্রস্তুতির মাধ্যমে ক্ষতি কমানো সম্ভব।