হেল্পলাইন ১০৯ চলছে অস্থায়ী ব্যবস্থায়।

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৫, ১২:৪৮ অপরাহ্ণ
হেল্পলাইন ১০৯ চলছে অস্থায়ী ব্যবস্থায়।

দেশজুড়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিবাদ ও সমাবেশ চলছে। নির্যাতন প্রতিরোধ ও দ্রুতবিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিপদে থাকা নারীদের সহায়তাব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। সরকার পুলিশের ‘হটলাইন’ সেবার পাশাপাশি নতুন ‘শর্ট কোড’ চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সরকারের সবচেয়ে বড় প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত জাতীয় হেল্পলাইন ১০৯ নানা সংকটে রয়েছে। প্রকল্পের অনিশ্চয়তা, জনবলসংকট ও অনিয়মিত বেতনের কারণে দুই বছর ধরে কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ চলছে।

সম্প্রতি সরকার ‘৩৩৩৩’ শর্ট কোড চালুর ঘোষণা দিয়েছে, যা ৩৩৩ নম্বরের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এবং নির্যাতনবিষয়ক অভিযোগ সরাসরি পুলিশের কলসেন্টারে পাঠানো হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন হটলাইনের পরিবর্তে ১০৯ নম্বরকে আরও কার্যকর করা প্রয়োজন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরিচালিত ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টি সেক্টরাল প্রোগ্রাম’-এর আওতায় হেল্পলাইন ১০৯ ছাড়াও বেশ কিছু সেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে, যেমন ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার, ডিএনএ ল্যাব, ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার ও মোবাইল অ্যাপ ‘জয়’।

তবে, হেল্পলাইন ১০৯ বর্তমানে সংকটপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। জনবল সংকট, বেতন বকেয়া থাকা এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সুবিধার অভাবের কারণে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক সংস্থা ডানিডার সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সরকার সীমিত বাজেট নিয়ে এটি চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে হেল্পলাইনে কর্মীসংখ্যা কমে যাওয়ায় কল ড্রপের হার ২৫-৩০ শতাংশ।

হেল্পলাইন ১০৯-এর ইনচার্জ রাইসুল ইসলাম জানিয়েছেন, জনবল বাড়ানো, আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন এবং পুলিশ, আইনজীবী, কাউন্সেলর ও চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি দল গঠন করা হলে হেল্পলাইনটি আরও কার্যকর হবে। গত বছর ১০৯-এ ৯ লাখ ৩৯ হাজারের বেশি কল এসেছে, যার মধ্যে অধিকাংশ কলের উত্তর দেওয়া সম্ভব হলেও সরাসরি সহায়তার অভাব রয়ে গেছে।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধ প্রকল্পের পরিচালক প্রকাশ কান্তি চৌধুরী জানিয়েছেন, জুলাই মাসের মধ্যে নতুন প্রকল্প চালু হবে, যেখানে ৩৬০ কোটি ৯০ লাখ টাকা বাজেট বরাদ্দ থাকবে এবং জনবল ৬০-এ উন্নীত করা হবে। নতুন প্রকল্পের আওতায় কুইক রেসপন্স টিম, নিয়মিত ফলোআপ, ভুক্তভোগীদের আর্থিক সহায়তা এবং পুনর্বাসনের সুযোগ থাকবে। বর্তমান প্রকল্পের ২৬২ কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরির বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন প্রকল্পের জনবল আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হবে, যেখানে পুরোনো কর্মীরাও অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হেল্পলাইন ১০৯-এর প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ানো জরুরি। এটি কার্যকর না হলে একাধিক হটলাইন চালু করেও সুফল পাওয়া যাবে না।