চীন সফরে ব্যবসায়িক বৈঠক ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের আশা প্রধান উপদেষ্টার

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫, ৩:৪৬ অপরাহ্ণ
চীন সফরে ব্যবসায়িক বৈঠক ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের আশা প্রধান উপদেষ্টার

আসন্ন চীন সফরে দেশটির বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আগামীকাল তিনি চার দিনের সফরে চীন যাচ্ছেন, যেখানে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হবে। এছাড়া চীনের বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সিইওদের সঙ্গেও বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষ করে, বিশ্বের সর্ববৃহৎ সোলার প্যানেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লংজি বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।

তিনি আরও জানান, সফরের আলোচনায় প্রযুক্তিগত সহায়তা, মেডিকেল সহায়তা, স্বল্পমূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। চীন বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা আমদানি করতে চায় এবং এটি খুব শিগগিরই শুরু হবে।

বাংলাদেশকে বৈশ্বিক মানচিত্রে আরও উচ্চস্থানে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সরকার আসিয়ানের সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও জানান ড. ইউনূস। তিনি উল্লেখ করেন, মালয়েশিয়া বর্তমানে আসিয়ানের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছে এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বাংলাদেশের আবেদনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য তিনি ড. ইউনূসকে মালয়েশিয়া সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, যা তিনি গ্রহণ করেছেন।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মালয়েশিয়া জাতিসংঘের সম্মেলন আয়োজনের দায়িত্ব নিয়েছে এবং বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব জটিলতা তৈরি হয়েছিল, সেগুলো সমাধানে আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলেও জানান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান।

বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান নিয়ে যৌথ অর্থনীতির সম্ভাবনার বিষয়ে তিনি বলেন, এই চার দেশ একত্রে কাজ করলে সবাই উপকৃত হবে। নেপাল ও ভূটান জলবিদ্যুৎ সরবরাহে আগ্রহী, যা বাংলাদেশের শিল্প খাতের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি বিস্তীর্ণ মহাসাগরীয় অঞ্চলের অধিকারী, যা বড় অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। কুমিরা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত দীর্ঘ উপকূলে আন্তর্জাতিক মানের সমুদ্র বন্দর, শিল্প কারখানা ও রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল গড়ে তুললে অর্থনীতির দ্রুত পরিবর্তন সম্ভব।

বিদ্যুৎ খাতে টেকসই উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি জানান, নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আনলে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমবে, যা পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ যথাসময়ে শেষ করার ওপরও সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। রোসাটমের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি শিগগির পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ শুধু নিজের জন্য নয়, পুরো অঞ্চলের জন্য অর্থনৈতিক কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্য নেপাল, ভূটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে যাবে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর পণ্যও এখানে আসবে, যা এক লাভজনক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলবে। এই উদ্যোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে বাংলাদেশ, যা ভবিষ্যৎ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।