গাজায় ১৫ স্বাস্থ্যকর্মী হত্যার প্রমাণ ভিডিও প্রকাশ : ইসরায়েলি দাবি মিথ্যা প্রমাণিত

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: শনিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৫, ৬:২৫ অপরাহ্ণ
গাজায় ১৫ স্বাস্থ্যকর্মী হত্যার প্রমাণ ভিডিও প্রকাশ : ইসরায়েলি দাবি মিথ্যা প্রমাণিত

২৩ মার্চ দক্ষিণ গাজার রাফায় একটি অ্যাম্বুলেন্স বহরে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিবর্ষণে ১৫ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় নতুন ভিডিও প্রমাণ সামনে এসেছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের শনিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার সময় অ্যাম্বুলেন্স ও অগ্নিনির্বাপক ট্রাকে স্পষ্টভাবে জরুরি আলো জ্বলছিল—যা ইসরায়েলের পূর্বের দাবিকে সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা প্রমাণ করে।

ইসরায়েল শুরুতে দাবি করেছিল, ওই অ্যাম্বুলেন্সগুলো হেডলাইট ছাড়া চলছিল এবং সেগুলোতে হামাস যোদ্ধারা ছিলেন। কিন্তু ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রাস্তায় দ্রুতগতিতে ছুটে চলা অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার ট্রাকের ওপর আচমকা গুলি বর্ষণ শুরু হয়। এরপর এক ব্যক্তিকে আতঙ্কিত কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, “হে স্রষ্টা, আমি আশা করি তারা ঠিক আছে… তারা চারপাশে পড়ে আছে, সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।”

ভিডিওটি ধারণকারী ব্যক্তি গাড়ি থেকে নামার পরপরই গুলির শব্দ শোনা যায় এবং তাকে শাহাদা পাঠ করতে শোনা যায়—যা মৃত্যুর মুখোমুখি হলে মুসলিমরা পড়ে থাকেন। ভিডিওটি হঠাৎ অন্ধকার হয়ে যায় এবং এরপর আরও পাঁচ মিনিট গুলিবর্ষণ চলতে থাকে। এসময় হিব্রু ভাষায় কিছু অস্পষ্ট আদেশ ও আরবিতে আতঙ্কিত আওয়াজ ধ্বনিত হয়।

এই ভিডিও ফুটেজ জাতিসংঘের এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকের মাধ্যমে নিউ ইয়র্ক টাইমস হাতে পায়, যিনি নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। জানা গেছে, ভিডিওটি একজন চিকিৎসকের মোবাইলে ধারণ করা হয়েছিল, যিনি পরে নিখোঁজ হন এবং তার পরিবার ইসরায়েলি প্রতিশোধের আশঙ্কায় রয়েছেন।

ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের কর্মকর্তারা জাতিসংঘের এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, নিহতদের লাশ দক্ষিণ গাজার একটি ধুলোমাখা গণকবর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সঙ্গে মাটিচাপা দেওয়া অ্যাম্বুলেন্সগুলিও ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলি বাহিনী বুলডোজার দিয়ে লাশগুলো চাপা দেয়। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে অন্তত তিনটি ইসরায়েলি সামরিক বুলডোজার ও একটি খননকারী যন্ত্র ছিল, এবং রাস্তার দুই পাশে মাটির বাধ তৈরি করা হয়েছিল।

এই হত্যাকাণ্ডের পরপরই ইসরায়েল স্বীকার করে, তারা ‘সন্দেহজনক যানবাহন’ লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল। কিন্তু ভিডিও এবং স্যাটেলাইট প্রমাণ ইঙ্গিত করে, এটি একটি সচেতন ও পরিকল্পিত হামলা ছিল—যার লক্ষ্য ছিল মানবিক সহায়তাকর্মীদের।

ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট প্রধান ড. ইউনিস আল-খাতিব বলেন, “মানবিক সহায়তাকারীদের খুব কাছ থেকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। আট দিন ধরে মৃতদেহগুলোর অবস্থান আমাদের জানানো হয়নি।” ভিডিওটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চলছে।

এই ঘটনার পটভূমিতে বলা যায়, যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েল ১৮ মার্চ গাজায় বোমাবর্ষণ ও নতুন স্থল হামলা শুরু করে। এর পাঁচদিন পরই ঘটে এই বর্বর গণহত্যা। আন্তর্জাতিক মহলে ইতোমধ্যে নিন্দা ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে, তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখনো নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

এই রিপোর্ট মানবতা ও সত্য প্রকাশের লড়াইয়ে আরেকটি ধাপ—যেখানে প্রমাণ, বিবেক ও সাংবাদিকতা মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে যুদ্ধযন্ত্রের।