আরব দেশগুলোর নীরব সমঝোতায় শক্তিশালী হচ্ছে ইসরায়েল

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫, ৬:৪৬ অপরাহ্ণ
আরব দেশগুলোর নীরব সমঝোতায় শক্তিশালী হচ্ছে ইসরায়েল

ইসরায়েল ও আশপাশের মুসলিম দেশগুলোর সম্পর্ক বরাবরই ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক বিনিয়োগ, রাজনৈতিক সমঝোতা এবং সামরিক সুবিধার মাধ্যমে এক ধরনের পরোক্ষ মিত্রতায় পরিণত হচ্ছে ইসরায়েল ও কিছু আরব দেশ। আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন যেমন ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করেছে, তেমনি সৌদি আরব, জর্ডান ও মিশরের মতো দেশগুলোও ইসরায়েলের সঙ্গে গোপনভাবে নানা স্তরে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

২০২০ সালের আব্রাহাম চুক্তির পর ইসরায়েলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেক দ্রুতগতিতে বেড়েছে। বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরায়েলের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ২০২৪ সালে ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি একটি আরব প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০২৫ সালে ইসরায়েলের সামরিক প্রযুক্তি কোম্পানিতে ১০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। পাশাপাশি, মিশর ১৯৭৯ সালের ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির পর থেকে ইসরায়েলে গ্যাস রপ্তানি করে আসছে এবং ২০২৪ সালে গ্যাস রপ্তানির হার ১২% বেড়েছে। জর্ডানও শান্তি চুক্তির পর কৃষি ও পানি বণ্টনের মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

রাজনৈতিক দিক থেকেও এই সহযোগিতার গভীরতা বাড়ছে। সৌদি আরব আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি না দিলেও, ইরানকে একটি সাধারণ শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে দুই দেশ একে অপরের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি করছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। এমনকি ২০২৪ সালে ইরানের হামলা প্রতিহত করতে সৌদি আরব ও জর্ডান তাদের আকাশসীমা ইসরায়েলি এবং মার্কিন বাহিনীর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। বাহরাইন ও মরক্কোর মতো দেশও ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে, যা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।

সামরিক দিক থেকেও আরব দেশগুলো পরোক্ষভাবে ইসরায়েলকে সুবিধা দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এসব দেশের ভূখণ্ড, বন্দর এবং সামরিক ঘাঁটি অস্ত্র সংরক্ষণ ও পরিবহনে ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কাতার ও সৌদি আরবের মার্কিন ঘাঁটিগুলো এসব কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তুরস্ক, যদিও নিজেকে ফিলিস্তিনপন্থী দাবি করে, তারপরও গাজা যুদ্ধ চলাকালীন ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে গেছে, এমনকি সামরিক সরঞ্জামও পাঠানো হয়েছে বলে কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

এই পুরো সহযোগিতার পেছনে রয়েছে ইরানবিরোধী কৌশলগত স্বার্থ। ইরানের প্রভাব মোকাবিলায় সৌদি, আমিরাত, বাহরাইনসহ অনেক আরব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে গোপনে মিলে কাজ করছে। জর্ডান ও মিশরও নিজেদের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার স্বার্থে সংঘাত এড়িয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছে।

তবে এই সহযোগিতার পেছনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে—জনমতের বিরুদ্ধে গিয়ে সরকারগুলো কীভাবে এই সম্পর্কগুলো টিকিয়ে রাখছে? আরব দেশগুলোর সাধারণ জনগণ এখনো ব্যাপকভাবে ফিলিস্তিনপন্থী এবং ইসরায়েলবিরোধী। তাই সরকারগুলো নিজেদের স্বার্থে এই সমঝোতাগুলো গোপন রাখে এবং মাঝে মাঝে ফিলিস্তিন ইস্যুতে প্রতীকী সমর্থন দেখিয়ে জনমতকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নীরব সমঝোতা ও সহযোগিতাগুলো মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে। আরব বিশ্বের একাংশের কৌশলগত, অর্থনৈতিক এবং সামরিক সহযোগিতার ফলে ইসরায়েল এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী, প্রভাবশালী এবং নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।