ইসরায়েলের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে নতুন এক সংকট দানা বেঁধেছে, যা দেশটিকে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। এর পাশাপাশি দুর্নীতির মামলাও চলছে তার বিরুদ্ধে। তবে সর্বশেষ সংকটটি আরও জটিল ও ভয়াবহ। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেটের তদন্তে উঠে এসেছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলার বিষয়ে আগাম তথ্য থাকা সত্ত্বেও নেতানিয়াহু প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এমনকি তার অফিস হামাসকে কাতারের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর বিষয়েও সম্পৃক্ত ছিল বলে জানা গেছে, যার কিছু অংশ আত্মসাৎ করা হয়।
হারেৎজ পত্রিকার তথ্যমতে, সেদিন ইসরায়েলি সৈন্যদের ‘হানিবাল নির্দেশিকা’ অনুযায়ী এমন আদেশ দেওয়া হয় যাতে নিজ দেশের সৈন্য ও নাগরিকদের হত্যা করে তারা যেন হামাসের হাতে বন্দি না হয়। এর ফলে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে শুধু ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা নয়, নিজ দেশের মানুষের প্রাণহানির দায়ও এসেছে। এই তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে শিন বেট প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করতে উদ্যোগী হন নেতানিয়াহু, যদিও ইসরায়েলের অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট তাকে এ বিষয়ে বিরত থাকতে নির্দেশ দেন। রোনেন বার নিজেও বরখাস্তের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন এবং আদালত তার পক্ষে রায় দেয়।
তবে নেতানিয়াহু আইন ও আদালতের রায় উপেক্ষা করে রোনেনের সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান এবং তাকে পদত্যাগে বাধ্য করার চেষ্টা চালান। তার এই অবস্থান ইসরায়েলের গণতন্ত্র, প্রতিষ্ঠান ও নৈতিকতার বিরুদ্ধে অবস্থান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, নেতানিয়াহু তার ব্যক্তিগত স্বার্থে গোটা দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। ইতিমধ্যেই হামাসের হাতে বন্দি থাকা ৫৯ জনের জীবনের ঝুঁকি বাড়ানোর জন্যও নেতানিয়াহুকে দায়ী করা হচ্ছে। এসব ঘটনার জেরে তেল আবিবে দুই লক্ষাধিক মানুষ বিক্ষোভ করেছে এবং তার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে। বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিডসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ জনগণ তাকে দেশব্যাপী সংকটের মূল হোতা হিসেবে দায়ী করছেন।
ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট সরাসরি বলেছেন, নেতানিয়াহুই এখন ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় শত্রু। তিনি সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সংঘাতে জড়াচ্ছেন, রাষ্ট্রকে দুর্বল করছেন এবং বিচার বিভাগকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে চাইছেন। সুপ্রিম কোর্টে নিজের অনুগত বিচারক বসানোর জন্য বিচারকমণ্ডলী নির্বাচনী কমিটির কাঠামো পরিবর্তনের পরিকল্পনাও চলছে। এই সকল পদক্ষেপ ইসরায়েলের রাজনীতি, বিচারব্যবস্থা এবং সমাজে মারাত্মক বিভাজন সৃষ্টি করছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, যদি এখনই জনগণ সিদ্ধান্ত না নেয়, তবে দেশটি রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, গৃহযুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক পতনের দিকে ধাবিত হবে। ইসরায়েলের সামনে এখন এক কঠিন প্রশ্ন—তারা কি একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ও গণহত্যাকারী নেতার অধীনে থাকবে, নাকি তাকে অপসারণ করে দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে পুনরুদ্ধার করবে।
আপনার মতামত লিখুন