ফিফার আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক লাভ, তবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশটির ঘরোয়া ফুটবল

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: বুধবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৫:১৯ অপরাহ্ণ
ফিফার আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক লাভ, তবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশটির ঘরোয়া ফুটবল

বিশ্ব ফুটবল ইভেন্টগুলির জন্য এখন যুক্তরাষ্ট্র একটি অন্যতম গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। ক্লাব বিশ্বকাপ, ফুটবল বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা—এসব বড় টুর্নামেন্ট এখন যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত হচ্ছে, কারণ এখানকার টিকিট বিক্রি, স্পনসরশিপ এবং সম্প্রচার স্বত্বের চাহিদা আকাশছোঁয়া। তবে প্রশ্ন উঠছে, ফিফার এই আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া ফুটবলের কী লাভ হচ্ছে, কিংবা এর কোনো উন্নয়ন হচ্ছে কিনা?

মেজর সকার লিগ (এমএলএস) এমন একটি লিগ, যেখানে বিশ্বব্যাপী আলোচিত হচ্ছে শুধুমাত্র লিওনেল মেসি, সের্হিও বুস্কেটস, লুইস সুয়ারেজদের মতো তারকা ফুটবলারদের উপস্থিতি। তবে এমএলএস এর বাইরেও কোনো ক্লাব গগনচুম্বী সাফল্য পেতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিফা শুধুমাত্র মুনাফা অর্জন করছে, কিন্তু তাদের ঘরোয়া ফুটবলের জন্য কোনো সাহায্য প্রদান করছে না।

২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বসতে যাচ্ছে ৩২ দল নিয়ে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ। এছাড়া ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ও মেক্সিকোতে। এমনকি ২০৩১ সালে হতে যাওয়া নারী বিশ্বকাপের আয়োজকও যুক্তরাষ্ট্র। এসব আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের আয়োজক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় থাকলেও, তাদের ঘরোয়া ফুটবল লিগের কোনো উন্নতি হচ্ছে না।

ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো সম্প্রতি ফক্স স্পোর্টসকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে টুর্নামেন্ট আয়োজন করলে তাদের রাজস্ব দ্বিগুণ হয়ে যায়,” এবং “যদি যুক্তরাষ্ট্র আমার কথায় চলে, তাহলে তাদের লিগ বিশ্বের সেরা হয়ে উঠবে।” কিন্তু এর আড়ালে রয়েছে এমন এক বাস্তবতা, যেখানে ফিফার আন্তর্জাতিক ফুটবল আয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঢুকে গেছে এমনভাবে যে, এমএলএসের জন্য শ্বাস নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে।

রেলেভেন্ট স্পোর্টস নামক একটি মার্কিন কোম্পানি ফিফা ও ইউএস সকারের বিরুদ্ধে একটি অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা করেছে, যার ফলস্বরূপ স্পেন বা ইতালির ঘরোয়া লিগও তাদের প্রধান প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচগুলি যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজন করতে পারবে। তবে এতে এমএলএসের কোনো উপকার হচ্ছে না, এবং তাদের প্রচারণাও বাড়ছে না।

এমএলএস এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া ফুটবল এখন এক কঠিন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে, যেখানে বিদেশি লিগের আগ্রাসন ঠেকানোর জন্য ‘সকার প্রোটেকশনিজম’ একটি জরুরি পদক্ষেপ হতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, যদি যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের লিগকে বাঁচাতে চায়, তাহলে এখনই এমন কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে ফিফার এই অর্থলোভের নীতির ফলে ঘরোয়া ফুটবল বাজারের জন্য এখনো কোনো সুরক্ষা নেই।

ফিফার এই অর্থলোভ আজ যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া ফুটবলকে এমন জায়গায় নিয়ে এসেছে, যেখানে তারা প্রশ্ন তুলছে—এই দেশের ফুটবল বাজার কি সত্যিই দেশটির ফুটবলের উন্নতির জন্য, নাকি শুধু আন্তর্জাতিক সংগঠনের লুটপাটের জন্য?