বিশেষ ক্ষেত্রে প্রসূতিকালীন ছুটি চারবার পর্যন্ত, পিতৃত্বকালীন ছুটির সুপারিশ

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এই প্রতিবেদনে কর্মজীবী নারীদের প্রসূতিকালীন ছুটি চারবার পর্যন্ত মঞ্জুর করার সুপারিশ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশ সরকারি চাকরি বিধিমালার বিদ্যমান নিয়মের পরিপন্থী। বর্তমানে একজন নারী মাত্র দুইবার এই ছুটি পাওয়ার সুযোগ পান, তাও কেবল সরকারি চাকরিতে। কমিশনের মতে, মৃত সন্তান প্রসব, সন্তানের মৃত্যু, দ্বিতীয় বিবাহে সন্তানসহ বিশেষ পরিস্থিতিগুলো বিবেচনায় এনে এই ছুটি শিথিল করা জরুরি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটির পাশাপাশি পিতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ দুই সপ্তাহ নির্ধারণ করে পূর্ণ বেতনের ব্যবস্থা রাখা উচিত। দত্তক সন্তানের জন্যও মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করতে হবে। এই সুপারিশসমূহ নারী ও শিশুর কল্যাণ, স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিবারকে সুরক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে প্রণীত।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বিদ্যমান শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী নারী শ্রমিকদের ছুটি মাত্র ১১২ দিন, যা পর্যাপ্ত নয়। দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক ও নারী অধিকারকর্মীরা ছয় মাসের ছুটির দাবি জানিয়ে আসছেন, যদিও মালিকপক্ষ এতে রাজি হয়নি। কিছু পোশাকশিল্প কারখানায় ১২০ দিনের ছুটি দেওয়া হলেও সেটিও সবখানে বাস্তবায়ন হয়নি।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন আরও প্রস্তাব করেছে, দত্তক সন্তানের জন্য একটি স্বতন্ত্র আইন প্রণয়ন করতে হবে যাতে দত্তক শিশুদের অধিকার নিশ্চিত হয় এবং তারা গর্ভজাত সন্তানের মতো সব আইনি সুবিধা পায়। এ লক্ষ্যে ১৮৯০ সালের অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন সংস্কার করে শিশু কল্যাণ, উত্তরাধিকার এবং পিতা-মাতার অধিকার স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে।
এই সুপারিশগুলোর মধ্যে ‘প্রসূতি কল্যাণ’ শব্দের পরিবর্তে ‘প্রসূতি অধিকার’ শব্দ ব্যবহার, প্রসূতিকালীন ছুটির সময় চাকরিচ্যুতি নিষিদ্ধ করা, এবং সব খাতে পূর্ণ বেতনে ছুটি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। নারী অধিকারকর্মীরা মনে করেন, বর্তমান সমাজব্যবস্থায় পরিবার ছোট হচ্ছে, একক মায়ের সংখ্যা বাড়ছে, আর এক্ষেত্রে বাবা-মায়ের দুজনেরই ছুটি প্রয়োজন। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কমিশন মানবিক ও প্রগতিশীল পদক্ষেপ হিসেবে ছুটি বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে।
আপনার মতামত লিখুন