গণতন্ত্রের সংকট, ফ্যাসিবাদের উত্থান ও প্রশাসনিক দুর্নীতির ছায়ায় বাংলাদেশ

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:৪৪ অপরাহ্ণ
গণতন্ত্রের সংকট, ফ্যাসিবাদের উত্থান ও প্রশাসনিক দুর্নীতির ছায়ায় বাংলাদেশ

গত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের ঘাটতি ও কাঠামোগত দুর্বলতার ধারাবাহিক ফল হিসেবে দেশে এক ধরনের ফ্যাসিবাদী শাসনের উত্থান ঘটেছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সংসদ ভবনের এলডি হলে অনুষ্ঠিত এক সংলাপে এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, ছাত্র ও সাধারণ জনগণের এখনকার প্রধান আকাঙ্ক্ষা একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে আর কাউকে গুম, খুন বা বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার না হতে হয়। এই লক্ষ্যেই কমিশন একটি সর্বজনগ্রাহ্য জাতীয় সনদ তৈরি করতে চায়, যা ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গঠনে রূপরেখা হিসেবে কাজ করবে। আলী রীয়াজ আরও বলেন, কমিশন কোনো রাজনৈতিক বিকল্প নয়, বরং একটি অনুঘটক শক্তি হিসেবে কাজ করছে—যেখানে ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী দমন-পীড়নের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নাগরিক ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে।

অন্যদিকে, এই কাঠামোগত দুর্বলতাকে পুঁজি করে সরকারি প্রশাসনে দুর্নীতির বিস্তার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। স্থানীয় সরকার ও যুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মোয়াজ্জেম হোসেন, এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত সহকারী তুহিন ফারাবি ও ডা. মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্য, বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ঘুরে ঘুরে তারা প্রকৌশলী ও চিকিৎসকদের বদলি, ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়া, এমনকি পুলিশের অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনায় ঠিকাদারদের বিল অনুমোদনের জন্যও তদবির করতেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত সরকারি দপ্তরে অবস্থান করে এই তদবির চালানো হতো, যা প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ওপর গুরুতর আঘাত হেনেছে।

এই প্রেক্ষাপটে, একদিকে নাগরিক সমাজ যেখানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি তুলছে, অন্যদিকে প্রশাসনের অভ্যন্তরে দুর্নীতিগ্রস্ত চক্রের অপতৎপরতা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথকে আরো কঠিন করে তুলছে। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার যদি এইভাবে চলতে থাকে, তবে শুধু রাজনৈতিক কাঠামোই নয়, রাষ্ট্রের নৈতিক ভিত্তিও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখন সময় এসেছে দায়িত্বশীল ও স্বচ্ছ নেতৃত্বের মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলা করার, নাহলে গণতন্ত্রের জায়গা ক্রমেই আরও সংকুচিত হয়ে পড়বে এবং ফ্যাসিবাদী শাসনের শিকড় আরও গভীরে প্রোথিত হবে।