অনলাইন জুয়ার ভয়াল থাবা ও হজ ব্যবস্থাপনার নতুন অগ্রগতি: বাংলাদেশের দুই বিপরীত চিত্র
 
                                                                    বাংলাদেশের সাম্প্রতিক দুটি ঘটনা দেশের সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার দুটি ভিন্ন বাস্তবতা সামনে এনেছে—একদিকে পবিত্র হজযাত্রা সুষ্ঠুভাবে শুরু হয়েছে, অন্যদিকে তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ ধ্বংসের পথে এগোচ্ছে অনলাইন জুয়ার কবলে পড়ে।
প্রথম হজ ফ্লাইটটি সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা হয়েছে সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাত সোয়া ২টায়, যাতে ছিলেন ৩৯৮ জন যাত্রী। এ বছর বাংলাদেশ থেকে ৮৭,১০০ জন হজে যাবেন, যাদের মধ্যে ৫,২০০ জন সরকারি ব্যবস্থাপনায়। হজ ফ্লাইট চলবে ৩১ মে পর্যন্ত। সরকারের পক্ষ থেকে যাত্রীসেবায় প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে দেখা যাচ্ছে—হাজীদের জন্য চালু করা হয়েছে ‘লাব্বাইক’ অ্যাপ, দেওয়া হচ্ছে প্রিপেইড কার্ড ও মোবাইল রোমিং সুবিধা। এটি হজ ব্যবস্থাপনাকে আরও আধুনিক ও হজযাত্রীবান্ধব করতে এক বড় পদক্ষেপ।
অন্যদিকে দেশের তরুণ সমাজের মধ্যে অনলাইন জুয়ার ভয়াবহ বিস্তার নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ‘সিকে৪৪৪’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইট সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে, যেখানে লোভনীয় অফার দিয়ে তরুণদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে। অনেকেই স্বল্প সময়ে অর্থ উপার্জনের আশায় এই অ্যাপে যুক্ত হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ তিন দিনে ২৯ হাজার টাকা জিতলেও ছয় মাসে হারিয়েছেন ২ লাখ টাকা। অনেকেই স্বীকার করছেন, এটি এক ধরনের ভয়ংকর নেশা, যেখান থেকে বের হওয়া কঠিন। গবেষণায় দেখা গেছে, মাসে শুধু “সিকে৪৪৪” শব্দটি দিয়েই গুগলে ৯৫ হাজার বার সার্চ করা হয়েছে এবং এক দিনে এই সাইটে ৩ লাখ ৬৯ হাজারেরও বেশি ভিজিটর প্রবেশ করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে হাইকোর্ট একটি রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে অনলাইন জুয়া ও বেটিং অ্যাপগুলোর কার্যক্রম তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ও আশ্বাস দিয়েছে, নতুন সাইবার সুরক্ষা আইনে অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ করা হবে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবুও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, দৃশ্যমান কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখনো চোখে পড়ছে না।
এই দুটি সংবাদ একদিকে যেমন রাষ্ট্রের ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের সফল উদাহরণ দেয়, অন্যদিকে তরুণদের একটি বড় অংশকে রক্ষার জন্য জরুরি হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরে। প্রযুক্তি যেমন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে, তেমনি অপব্যবহার সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে—বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র যেন তারই বাস্তব প্রমাণ।


 
                                             
                                             
                                             
                                             
                                             
                                             
                                            
আপনার মতামত লিখুন