চাপে বিধ্বস্ত ক্রিকেটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৯:২০ অপরাহ্ণ
চাপে বিধ্বস্ত ক্রিকেটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ

কয়েকদিন ধরেই দেশের ক্রিকেট অঙ্গন নানা ধরনের সমালোচনায় টালমাটাল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অভ্যন্তরে চলছে চরম উত্তেজনা, অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মতবিরোধ। ব্যাংকিং খাত থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার জেরে একে অপরের বিরুদ্ধে চলছে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। এমন অস্থিরতা যখন পাড়ার অলিতে-গলিতে ক্রিকেট আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, ঠিক তখনই মাঠের পারফরম্যান্সেও নেমে এসেছে ধস। চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে তাওহীদ হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা ঘিরে তৈরি হয়েছে ধারাবাহিক নাটকের মতো বিতর্ক। যার ফলে সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীর মনেও জন্ম নিচ্ছে বিরক্তি—বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতি এক ধরনের অনীহা।

ঠিক এমন সময়েই সিরিজ হার এড়াতে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টে পরাজয়ের পর সিরিজে টিকে থাকতে হলে এই ম্যাচ জিততেই হবে নাজমুল হোসেন শান্তর দলকে। তবে টস ভাগ্য এদিনও সহায় হয়নি, টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সফরকারী জিম্বাবুয়ে। ব্যাকফুটে থাকা বাংলাদেশ একাদশে এনেছে তিনটি পরিবর্তন, আর এই ম্যাচে টেস্ট অভিষেক হতে যাচ্ছে তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিবের।

ম্যাচপূর্ব অনুশীলনেও দেখা গেছে তানজিমের নিবেদন। সকালেই মাঠে এসে নিজের রানআপ মেপে নিয়েছেন, পরে গা গরমের পর বল করেছেন পাশের উইকেটে। যদিও মূল উদ্বেগ ব্যাটিং নিয়েই। সিলেট টেস্টে ব্যাটারদের হতশ্রী পারফরম্যান্সের খেসারত দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। উদ্বোধনী জুটিতে রানের খরা, মিডল অর্ডারের ধস, এমনকি অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমও দুই ইনিংসে মিলিয়ে করেছেন মাত্র ৮ রান। সেই জায়গা থেকেই কিছুটা স্বস্তি পেতে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এনামুল হক বিজয়কে ফেরানো হয়েছে একাদশে।

প্রথম টেস্টে ব্যাটারদের ব্যর্থতার বিপরীতে বোলারদের পারফরম্যান্স ছিল তুলনামূলক ভালো। মেহেদী হাসান মিরাজ ১০ উইকেট শিকার করে উজ্জ্বল ছিলেন, তার সঙ্গে জুটি গড়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। আগুনে বোলিং করে নজর কেড়েছিলেন নাহিদ রানা, যদিও তিনি এই টেস্টে নেই—পিএসএল খেলতে গেছেন পাকিস্তানে। তবে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স জানিয়ে দিয়েছেন, রানার অনুপস্থিতি নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় নেই। তার ভাষায়, “আমরা গতি হারিয়েছি ঠিকই, কিন্তু শক্তি হারাইনি। আমাদের দলে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে, বিশেষ করে এই উইকেটে কীভাবে বল করতে হয় সেটা ভালোই জানে বোলাররা।”

চট্টগ্রামের ভ্যাপসা গরমে কাহিল দলের খেলোয়াড়রা। অনুশীলনের ফাঁকে সিমন্স জানালেন, মাঠের বাইরের উত্তপ্ত পরিস্থিতি যেন মাঠের ভেতরে না আসে, সেটা নিশ্চিত করতেই চান তিনি। কোচ চান ক্রিকেট মাঠেই থাকুক। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটও একটু শীতল আশ্রয়ের খোঁজে, কারণ মাঠের বাইরের গরম অবস্থা মাঠের রোদের চেয়েও বেশি অসহনীয়।”

সবমিলিয়ে মাঠের ভেতরে-বাইরের চাপে জর্জরিত বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এক কঠিন পরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়ে। ২১ বছর পর জিম্বাবুয়ের কাছে টেস্ট সিরিজ হারের শঙ্কা এড়াতে চট্টগ্রামে ঘুরে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই শান্তদের সামনে। ফলাফল যা-ই হোক, এই ম্যাচে দেশের ক্রিকেটের মর্যাদা বাঁচানোর লড়াইয়ে নামছে এক বিশৃঙ্খলতার মধ্য দিয়ে যাওয়া একটি দল।