রেললাইনে প্রাণহানি: অসচেতনতার ট্র্যাজেডি ও আইনি বাস্তবতা

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫, ৪:৩৭ অপরাহ্ণ
রেললাইনে প্রাণহানি: অসচেতনতার ট্র্যাজেডি ও আইনি বাস্তবতা

সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরা রেলগেট এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছেন নবদম্পতি মাসুম মিয়া (২১) ও ইতি খাতুন (১৯)। তারা গার্মেন্টসে চাকরি করতেন এবং বিয়ের মাত্র দশদিন পর এভাবে মৃত্যুবরণ করেন। রেললাইনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে গিয়ে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনের নিচে পড়ে তারা ঘটনাস্থলে ও হাসপাতালে মারা যান। একই দিনে আরেকটি ঘটনা ঘটে মগবাজার পেয়ারাবাগ এলাকায়, যেখানে মো. আমির হোসেন (৫০) ট্রেন থেকে পা পিছলে পড়ে দুই পা হারান। এসব ঘটনা কেবল বিচ্ছিন্ন নয়, বরং প্রতিদিনকার বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে।

ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন, শুধু তাদের থানায় প্রতি মাসে ২৫–৩০টি ট্রেনে কাটা পড়ার ঘটনা ডায়েরিভুক্ত করা হয়। সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হলেও অসচেতনতা থেকে মানুষের জীবনহানি বন্ধ হচ্ছে না। চলন্ত ট্রেনে ওঠানামা, ছাদে ভ্রমণ, রেললাইনের পাশে ইয়ারফোন ব্যবহার, কিংবা সেলফি তোলা—এসবই প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে।

রেলওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ট্রেনে কাটা পড়ে ১,০১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৭৬ জনের কানে ইয়ারফোন ছিল এবং ৫০৪ জন রেললাইনের ওপর গল্প বা হাঁটার সময় প্রাণ হারান। ২০২৩ সালেও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল এর কাছাকাছি। এসব মৃত্যুর বেশিরভাগই ঘটে অসতর্কতা ও নিয়মভঙ্গের কারণে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, রেললাইন ধরে হাঁটা, বা লাইনের পাশে (১০ ফুটের মধ্যে) চলাচল করা অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেখানে ১৪৪ ধারা সবসময় কার্যকর থাকে, যা অনেকেই জানেন না বা গুরুত্ব দেন না। আইন অনুযায়ী, এই সীমানায় কাউকে পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা সম্ভব, এমনকি সেখানে গবাদি পশু চরালেও তা বিক্রি করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে।

এই ভয়াবহ বাস্তবতা আমাদের সামনে একটি বড় প্রশ্ন তোলে—আমরা কি সচেতন হচ্ছি? প্রযুক্তির মোহে পড়ে কিংবা অসাবধানতাবশত মানুষের জীবন এভাবে ঝরে যাওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ট্রেন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কেবল আইন প্রয়োগ যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পরিবার পর্যায়ে নিয়মিত সতর্কতামূলক আলোচনা, এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে দায়িত্বশীলতা। প্রতিটি জীবন মূল্যবান—একটি ভুল সিদ্ধান্ত যেন না হয়ে ওঠে চিরতরের ট্র্যাজেডি।