সরকারি চাকরি আইন সংশোধন: রাজপথের কর্মসূচি বন্ধে কঠোর শাস্তির বিধান

অন্তর্বর্তী সরকার ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে, যেখানে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হচ্ছে। এতে ১৯৭৯ সালের সামরিক আমলে প্রণীত ‘সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ’-এর কিছু ধারা আবার সংযোজন করা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত সংশোধনের মূল লক্ষ্য—সরকারি কর্মচারীদের রাজপথে সভা-সমাবেশ, কর্মবিরতি ও সচিবালয়ের অভ্যন্তরে বিক্ষোভসহ যেকোনো আন্দোলন বন্ধ করা। কেউ কর্মস্থলে যেতে বাধা দিলে, অন্যকে অনুপস্থিত থাকতে উসকানি দিলে কিংবা নিজেরাই অনুপস্থিত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ছাড়াই চাকরিচ্যুতির ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
চাকরিচ্যুতির নতুন প্রক্রিয়া কীভাবে হবে?
সংশোধিত খসড়ায় বলা হয়েছে—
- অভিযুক্ত কর্মচারীকে ২–৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হবে।
- চাইলে ব্যক্তিগত শুনানির সুযোগ মিলবে।
- তারপর কর্তৃপক্ষ যদি দোষী মনে করে, ৩ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করতে পারবে।
- অর্থাৎ সর্বোচ্চ ৮ দিনের মধ্যে চাকরি হারানোর সম্ভাবনা তৈরি হবে।
পদাবনতি, বেতন কর্তনের মতো শাস্তির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ শামীম সোহেল জানিয়েছেন, খসড়াটি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
প্রেক্ষাপট
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রশাসনে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। অনেক কর্মকর্তা আত্মগোপনে চলে যান বা দেশ ত্যাগ করেন। অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। কেউ কেউ সচিবালয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। সরকার মনে করছে, প্রশাসনের শৃঙ্খলা ফেরাতে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।
পদত্যাগ বা ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের জন্য কী মানে?
বর্তমানে সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী, ২৫ বছর চাকরির পর কাউকে জনস্বার্থে অবসরে পাঠানো যায়। কিন্তু নতুন সংশোধনীতে ২৫ বছর পূর্ণ না হলেও শুধুমাত্র নোটিশ দিয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে। পুলিশের ৮২ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওএসডি হলেও, বয়স না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছিল না—নতুন আইনে সে সুযোগও তৈরি হবে।
উদ্বেগ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন
এই উদ্যোগ নিয়ে প্রশাসনে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। অনেক কর্মকর্তা মনে করছেন, এতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হতে পারে। কাউকে সরকারবিরোধী মনে করলেই শাস্তি দেওয়ার ঝুঁকি থাকবে।
সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, “দায়িত্ব পালন না করলে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, তবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকা উচিত।”
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, “আইনের অপব্যবহার রোধে সরকারকে সুনির্দিষ্ট গ্যারান্টি দিতে হবে।”
আন্দোলনরত কর্মচারীদের ওপরও নজর
সচিবালয়ে বিক্ষোভকারী ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’-এর নেতারাও সরকারের কঠোর অবস্থানের মুখে পড়তে পারেন। সংগঠনের সমন্বয়ক মফিজুর রহমান বলেন, “এই সরকার তো গণতন্ত্রের কথা বলেছে। তাহলে এখন কেন কর্মচারীদের মুখ বন্ধ রাখতে চায়?”
এই সংশোধনী আইনকে অনেকেই ‘কালো আইন’ আখ্যা দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
আপনি চাইলে এই বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন, প্রেজেন্টেশন বা তথ্যচিত্রের খসড়া তৈরিতেও সাহায্য করতে পারি। আপনি কী কাজে ব্যবহার করতে চান এটি?
আপনার মতামত লিখুন