গরমে হিটস্ট্রোক: উপসর্গ, কারণ ও প্রতিকার

গরম আবহাওয়ায় আমাদের শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে হিটস্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। সাধারণত দীর্ঘসময় গরম পরিবেশে থাকার কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়। মার্কিন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান মায়ো ক্লিনিক জানাচ্ছে, দেহের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪°F) বা তার বেশি হলে হিটস্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হিটস্ট্রোকের শিকার হলে মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, বৃক্ক ও পেশির ক্ষতি হতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসা না নিলে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
হিটস্ট্রোকের উপসর্গ হিসেবে সাধারণত শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি মানসিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তি প্রলাপ বকা, অজ্ঞান হওয়া, বা খিঁচুনি ও বমি অনুভব করতে পারে। ত্বক লালচে হয়ে যেতে পারে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসও দ্রুত হতে পারে। এর সাথে সাথে হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে যায় কারণ শরীর ঠাণ্ডা করার জন্য হৃদযন্ত্র বেশি পরিশ্রম করতে থাকে। মাথাব্যথাও হয়ে থাকে এবং মনে হয়, মাথার ভেতর দপদপ করছে।
এছাড়া, হিটস্ট্রোকের শিকার হলে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ছায়ায় নিয়ে যেতে হবে এবং অতিরিক্ত জামাকাপড় সরিয়ে দিতে হবে। তারপর শরীর ঠাণ্ডা করার জন্য ঠাণ্ডা পানি ঢালা, গোসল করানো বা পানি ছিটানো যেতে পারে। ভেজা কাপড় দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ মুছতে হবে। এই পদক্ষেপগুলি শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সহায়ক হতে পারে।
হিটস্ট্রোক হওয়ার আরও কিছু কারণ রয়েছে। যেমন, গরমে অতিরিক্ত পরিশ্রম করা, গরম পরিবেশে বেশি সময় কাটানো, অতিরিক্ত কাপড় পরা, মদ্যপান করা, এবং পানি শূন্যতা (ডিহাইড্রেশন)। বিশেষ করে গরমে যারা বেশি পরিশ্রম করেন বা পানির অভাবে ভোগেন, তাদের হিটস্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে শিশুদের, বৃদ্ধদের, দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের, এবং অতীতে যারা হিটস্ট্রোকের শিকার হয়েছেন তাদের মধ্যে। এছাড়া, গরমের তীব্রতা বাড়লে বা ঠাণ্ডা থেকে গরম পরিবেশে যাওয়ার কারণে শরীর সঠিকভাবে সামঞ্জস্য করতে পারে না, যার ফলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
হিটস্ট্রোক প্রতিরোধ করতে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া যায়। হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা উচিত এবং রোদপোড়া রোধে সানগ্লাস, টুপি পরা উচিত। নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং শরীর ঠাণ্ডা রাখার জন্য ফ্যান বা এসি ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, পার্ক করা গাড়িতে কাউকে অপেক্ষায় রেখে যাওয়া উচিত নয়, কারণ রোদের মধ্যে গাড়ির তাপমাত্রা দ্রুত বাড়তে থাকে। গরমের সময় পরিশ্রমের কাজ কমিয়ে, ছায়ায় থাকতে হবে এবং সন্ধ্যার পর শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত।
এভাবে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি এড়িয়ে চলা সম্ভব, যদি আমরা সতর্কতা অবলম্বন করি এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করি।
আপনার মতামত লিখুন