নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: রবিবার, ৪ মে, ২০২৫, ৮:৪০ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সহিংসতা, সরকারবিরোধী আন্দোলন ও তার পরিণতি এক গভীর বিতর্ক ও বিচারপ্রক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। এক যুগ আগে, ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতের ডাকে বিশাল জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন রাজধানীজুড়ে এবং নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বাগেরহাটসহ সাত জেলায় ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি হিসেবে ওই ঘটনায় নিহত হন ১৯ জন, তবে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের মতে, নিহতের সংখ্যা ছিল ৬১ জন।

অধিকারের এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর সংগঠনটির তৎকালীন সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এএসএম নাসিরউদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা হয়। একইসঙ্গে, শাপলা চত্বরের ঘটনার পর হেফাজতের বিরুদ্ধে ৭টি জেলায় ৫৩টি মামলা দায়ের করা হয়, যার মধ্যে ৪৯টি এখনও নিষ্পত্তিহীন।

২০২১ সালের ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ ও সরকারি দলের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় হেফাজতের কর্মীরা। ওই সহিংসতা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং মোট ২২১টি মামলা দায়ের হয়। ফলে, হেফাজতের বিরুদ্ধে বর্তমানে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭০।

সম্প্রতি, হেফাজতের পক্ষ থেকে ২২০টি মামলার প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। তাদের দাবি, এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর শাখা ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে মামলা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া নিয়ে। হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হক স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আগামী দুই মাসের মধ্যে মামলা প্রত্যাহার ও নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিতে হবে, নাহলে হেফাজত যা করার তা-ই করবে।”

অন্যদিকে, শাপলা চত্বরের ঘটনার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি ‘মিস কেস’ দায়ের করা হয়েছে ২০২৫ সালের মার্চে। এতে শেখ হাসিনা, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ মোট ৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। ইতোমধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল।

সরকারি মহলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, সামনে নির্বাচন ঘিরে অপতথ্য ও গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা হতে পারে। সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, “অপপ্রচারের মাধ্যমে ব্যক্তি নয়, গোটা সমাজকে বিপদে ফেলা যায়।” বিশেষ করে ২০২৩ সালের জুলাই–আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের তথ্য বিকৃত করে উপস্থাপন করার চেষ্টার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

বর্তমানে বাংলাদেশ একদিকে ধর্মীয় রাজনীতি ও সহিংসতার বিচারের মুখোমুখি, অন্যদিকে অপতথ্য ও সাইবার অপরাধের হুমকির মধ্য দিয়ে একটি সংকটকাল অতিক্রম করছে। এই বাস্তবতা সামনে রেখে প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও সাধারণ মানুষের জন্য এটি এক বড় পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে—ন্যায়বিচার, তথ্যের সত্যতা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নে।