বেলুচিস্তানে বোমা বিস্ফোরণে সাত সেনা নিহত, নিরাপত্তাহীনতায় অস্থিরতা বাড়ছে

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে ফের ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (৬ মে) দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ বিভাগ (আইএসপিআর) জানায়, একটি বোমা বিস্ফোরণে সাতজন সেনা সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। আফগানিস্তান ও ইরান সীমান্তবর্তী এই প্রদেশে এরই মধ্যে চলমান বিচ্ছিন্নতাবাদী সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেই এ হামলার ঘটনা ঘটল।
এই বিস্ফোরণের কয়েকদিন আগেই, রবিবার (৪ মে) একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী পুলিশের একটি ভ্যানে হামলা চালিয়ে পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাকে জিম্মি করে। জানা গেছে, শুক্রবার গভীর রাতে ৩০ থেকে ৪০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী একটি মহাসড়ক অবরোধ করে এবং পুলিশের এসকর্টে থাকা একটি গাড়ি থামিয়ে বন্দীদের মুক্তি দিলেও পুলিশ কর্মকর্তাদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। একইসঙ্গে সন্ত্রাসীরা আশেপাশের কয়েকটি সরকারি ভবন ও একটি ব্যাংকে আগুন ধরিয়ে দেয়। সংঘর্ষের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর পাল্টা গুলিতে দুই জঙ্গি নিহত হয়।
এই হামলার দায় স্বীকার করেছে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ এই অঞ্চল বহুদিন ধরেই পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে চীন-সমর্থিত বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা চললেও, সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কারণে সেসব উদ্যোগ বারবার বাধার মুখে পড়ছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা প্রায় মাসেই ঘটছে। গত মার্চে বিএলএ একটি যাত্রীবাহী ট্রেন ছিনতাই করে শতাধিক যাত্রীকে জিম্মি করেছিল এবং তিন দিনব্যাপী সংঘর্ষে নিরাপত্তা সদস্যদের প্রাণহানি ঘটে। এপ্রিলেও কোয়েটা শহরের কাছে একটি সামরিক গাড়ির পাশে শক্তিশালী বিস্ফোরণে চার সেনা নিহত ও তিনজন আহত হন। সেই ঘটনার পেছনেও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা সন্দেহ করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব ধারাবাহিক হামলা কেবল নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাই নয়, বরং প্রদেশটির স্থানীয় জনগণের মাঝে জমে থাকা অসন্তোষ ও বঞ্চনার প্রতিফলন। ফলে বেলুচিস্তানে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন রাজনৈতিক সংলাপ, উন্নয়নমূলক কার্যক্রম এবং একটি ব্যাপক নিরাপত্তা কৌশল।
আপনার মতামত লিখুন