সিন্ধু পানি চুক্তি আংশিক স্থগিত, ভারত হঠাৎ চেনাব নদীতে পানি ছাড়লো—বাড়ছে ভারত-পাকিস্তান জল কূটনীতি উত্তেজনা

কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর পরই ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি (IWT) আংশিক স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়। এরই অংশ হিসেবে, সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের বাগলিহার ও সালাল বাঁধ থেকে পূর্ব ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ করে চেনাব নদীতে পানি ছেড়েছে ভারত, যা আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘনের ইঙ্গিত দেয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সাধারণত বর্ষা মৌসুমে, অর্থাৎ আগস্টে বাঁধ থেকে ‘রিজার্ভার ফ্লাশিং’ প্রক্রিয়ায় পানি ছাড়া হয়, যাতে পলি ও ময়লা সরিয়ে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কার্যকারিতা বজায় রাখা যায়। তবে এবার নিয়ম ভেঙে আগেভাগেই পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, এবং পাকিস্তানকে পূর্বে জানানোও হয়নি।
ভারতের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দ্য হিন্দুকে জানান, “এই সিদ্ধান্তের ফলে পাকিস্তানে অস্থায়ীভাবে পানির প্রবাহ বাড়তে পারে, তবে সেটা গুরুতর কিছু নয়। সমস্যা হতে পারে বাঁধ খালি থাকার সময়, কারণ তখন পানির প্রবাহ হ্রাস পাবে।”
প্রসঙ্গত, বাগলিহার বাঁধ ৯০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, যার পানি ধারণক্ষমতা ৪৭৫ মিলিয়ন কিউবিক মিটার। সালাল প্রকল্পের ক্ষমতা ৬৯০ মেগাওয়াট। দুই প্রকল্প থেকেই পানি ছাড়া হলেও কিশানগঙ্গা প্রকল্পে এখনো পানি ছাড়ার সম্ভাবনা নেই।
সিন্ধু নদীর শাখা চেনাব, ঝিলাম, রাভি, বিয়াস ও শতদ্রু নদীগুলো পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির ৮০ শতাংশ চাষযোগ্য জমি ও মোট জিডিপির প্রায় ২৫ শতাংশ এই পানির ওপর নির্ভরশীল।
ভারতের জলশক্তি মন্ত্রী সি. আর. পাতিল ২৬ এপ্রিল ঘোষণা দেন, “সিন্ধু থেকে একবিন্দু পানিও পাকিস্তানে যাবে না।” এ বক্তব্য এবং হঠাৎ পানি ছাড়া পাকিস্তানের জন্য এক ধরনের জল কূটনৈতিক চাপ তৈরি করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে এই পদক্ষেপ কেবলমাত্র কৃষি ও সেচব্যবস্থাতেই নয়, গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন