ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় বিপর্যস্ত আকাশপথ: বাতিল হচ্ছে শত শত ফ্লাইট

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার চলমান উত্তেজনা এবং পাল্টাপাল্টি হামলার প্রেক্ষিতে দুই দেশই পরস্পরের আকাশসীমা এড়িয়ে চলছে। চরম এই পরিস্থিতির ফলে দুই দেশের মিলিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৫৫২টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, এবং উত্তেজনা অব্যাহত থাকলে ফ্লাইট বাতিলের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং সেবা ফ্লাইটরাডার২৪ জানায়, পাকিস্তানে বাণিজ্যিক ফ্লাইটের ১৬ শতাংশ এবং ভারতে প্রায় তিন শতাংশ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে পাকিস্তানে ১৩৫টি এবং ভারতে ৪১৭টি নির্ধারিত ফ্লাইট বাতিলের তালিকায় পড়েছে। ভারতের শীর্ষস্থানীয় এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রীদের জন্য ভ্রমণ নির্দেশিকা জারি করেছে। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, জম্মু, শ্রীনগর এবং লাদাখের লেহ বিমানবন্দরসহ বেশ কিছু বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় তারা ১০ মে সকাল পর্যন্ত তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে।
বাংলাদেশের বিমানসংস্থাগুলোও পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলছে। বিকল্প রুট ব্যবহার করায় এসব ফ্লাইটে কিছুটা সময় বেশি লাগছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এ বি এম রওশন কবীর জানিয়েছেন, উত্তেজনার কারণে বাংলাদেশের বিমান পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চললেও ভারতের ওপর দিয়ে চলাচল এখনো স্বাভাবিক রয়েছে।
সংঘাতপূর্ণ এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স হিমশিম খাচ্ছে। ফ্লাইট বাতিল এবং রুট পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে নিরাপত্তার স্বার্থে। দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান এয়ার তাদের সিউল-দুবাই ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করে মিয়ানমার, বাংলাদেশ এবং ভারতের ওপর দিয়ে নতুন রুটে পরিচালনা করছে। তাইওয়ানের চায়না এয়ারলাইন্স বেশ কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল ও রুট পুনঃনির্ধারণ করেছে। তাইপে থেকে ফ্রাঙ্কফুর্ট ও অ্যামস্টারডামগামী ফ্লাইট ব্যাংককে ফিরে এসেছে এবং প্রাগ, রোম ও লন্ডনগামী ফ্লাইটগুলো বাতিল করা হয়েছে।
তাইওয়ানের আরেকটি এয়ারলাইন্স ইভা এয়ার জানায়, ইউরোপ থেকে আসা-যাওয়া ফ্লাইটগুলো প্রভাবিত আকাশসীমা এড়িয়ে পরিচালিত হচ্ছে যাতে যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। কিছু ফ্লাইট মাঝপথে ফিরে এসেছে এবং কিছু জ্বালানি নেওয়ার জন্য ভিন্ন শহরে থেমেছে। রাশিয়ার অ্যারোফ্লট জানিয়েছে, মস্কো থেকে ভারত, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এবং সেশেলসগামী ফ্লাইটগুলোর রুট পরিবর্তন করা হচ্ছে।
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সও পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স তাদের কুয়ালালামপুর-লন্ডন ও প্যারিস রুটের ফ্লাইটে দোহায় যাত্রাবিরতির মাধ্যমে বিকল্প রুট গ্রহণ করেছে এবং ৯ মে পর্যন্ত ভারতের অমৃতসর থেকে আসা-যাওয়া সব ফ্লাইট স্থগিত রেখেছে। থাই এয়ারওয়েজ ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ামুখী অন্তত আটটি ফ্লাইটে পরিবর্তন এনেছে এবং ব্যাংকক-ইসলামাবাদ একটি ফিরতি ফ্লাইট বাতিল করেছে। তবে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, তাদের ফ্লাইট এখন পর্যন্ত এই পরিস্থিতিতে প্রভাবিত হয়নি এবং লাহোর ও করাচিতে নির্ধারিত চারটি সাপ্তাহিক ফ্লাইট চালু রয়েছে।
এই পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী বিমান চলাচলকে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে এবং যদি সংঘাত আরও তীব্র হয়, তবে এশিয়া-ইউরোপ রুটের ফ্লাইটগুলোতে আরও বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন