নড়াইল সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে অচলাবস্থা

ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধিদের হাসপাতালে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির পর থমকে গেছে নড়াইল সদর হাসপাতালের স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। পরীক্ষানিরীক্ষা বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন সাধারণ রোগীরা। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অনেক রোগী ও তাদের স্বজন দিশেহারা অবস্থায় চিকিৎসা নিতে ব্যর্থ হয়ে অসহায়ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
৮ মে, সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুল গফফার এক অফিস আদেশ জারি করে (স্মারক নম্বর ২০২৫/৬১৬) নড়াইল জেলা বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল মালিক সমিতিকে চিঠি দেন, যেখানে বলা হয়—কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধি আর সদর হাসপাতাল এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। এর প্রতিবাদে ৯ মে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকরা জরুরি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন, তারা আর কোনো সরকারি হাসপাতাল থেকে আসা রোগীর কোনো টেস্ট করবেন না। এ সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয়।
ফলে ১০ ও ১১ মে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বহু রোগী প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন। শহরতলী থেকে আসা সেলিনা খাতুন বলেন, “ডাক্তার দেখানোর পরে রক্তের রিপোর্ট করাতে বলেছে। কিন্তু কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার টেস্ট করতে রাজি না। কোথায় যাব বুঝতেছি না।” একইভাবে কালিয়াকাটার রফিকুল ইসলাম জানান, “বউয়ের আল্ট্রাসোনোগ্রাম করাতে চেয়েছিলাম, তারা বললো—হাসপাতালের রোগী হলে করবে না।”
বেসরকারি ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস.এম. সাজ্জাদ বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক আমাদের এমন কোনো চিঠি দিতে পারেন না। সিভিল সার্জনের অফিস ছাড়া আমাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের এখতিয়ার তার নেই। চিঠি প্রত্যাহার না করলে আমরা কোনো সরকারি রোগীর পরীক্ষা করব না।” সমিতির সভাপতি বিদ্যুৎ সান্নাল জানান, “তত্ত্বাবধায়কের হঠকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আমরা শিগগির মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করব।”
অন্যদিকে, তত্ত্বাবধায়ক ডা. গফফার জানান, “এই সিদ্ধান্ত আমার একার নয়, এটি সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ। রোগীর পরীক্ষায় নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কারও আপত্তি থাকলে তারা সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলুক।”
এ অবস্থায় রোগীরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছেন। চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার হলেও, এমন টানাপোড়েন এবং সমন্বয়হীনতায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। সচেতন নাগরিকদের মতে, এ সংকটের দ্রুত ও কার্যকর সমাধান না হলে নড়াইল সদর হাসপাতালের ওপর থেকে মানুষের আস্থা আরও কমে যেতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন