পরমাণু অধিকার নিয়ে ইরানের অনড় অবস্থান, দোহায় সংলাপ শুরু

পরমাণু প্রকল্পকে নিজেদের অধিকার হিসেবে দাবি করে তেহরান জানিয়েছে, এই অধিকার থেকে ইরানকে বঞ্চিত করার যে কোনো চেষ্টাই ব্যর্থ হবে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগশি এক বিবৃতিতে স্পষ্ট করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি ইরানকে তার বৈধ অধিকার থেকে সরিয়ে দিতে চান, তাহলে তেহরান তা কখনোই মেনে নেবে না। এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে ইরান তার পরমাণু কার্যক্রমে অনড় অবস্থান তুলে ধরেছে।
কাতারের রাজধানী দোহায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সরাসরি সংলাপ শুরু হয়েছে, যেখানে ওমান মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। এই আলোচনার প্রেক্ষাপটে আরাগশি সাংবাদিকদের বলেন, যদি আলোচনার উদ্দেশ্য হয় ইরানকে তার বৈধ পরমাণু অধিকার থেকে বিরত রাখা, তবে ইরান সেই আলোচনা থেকে সরে আসবে। তবে যদি আলোচনার লক্ষ্য হয় পরমাণু অস্ত্র তৈরির ঝুঁকি কমানো, তাহলে ইরান এমন একটি চুক্তির জন্য প্রস্তুত।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উদ্বিগ্ন। ওয়াশিংটনের দাবি, ইরানের প্রকৃত লক্ষ্য পারমাণবিক বোমা তৈরি। এই উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে ২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিলেন, যার নাম ছিল ‘জ্যাকোপা’। তবে ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে যুক্তরাষ্ট্রকে সেই চুক্তি থেকে বের করে আনেন। এতে চুক্তিটি অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং ইরান আবারও পরমাণু কর্মসূচিতে মনোযোগ দেয়।
ফলে দেশটি গত কয়েক বছরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ জানিয়েছে, ইরান বর্তমানে ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত করছে। এই মাত্রা ৯০ শতাংশে পৌঁছালে অন্তত ছয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব হবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এই তথ্য সামনে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দেয় এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে চিঠি লিখে সরাসরি সংলাপের আহ্বান জানান। ইরান সেই আহ্বানে ইতিবাচক সাড়া দেয় এবং দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। আলোচনায় অংশ নিতে যাওয়া ইরানের প্রতিনিধি দল স্পষ্ট করে বলেছে, ইরান কখনোই নিজের অধিকার নিয়ে আপস করবে না এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের পরমাণু শক্তি ব্যবহার অব্যাহত থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন