সাম্য হত্যাকাণ্ডে প্রশাসনের দোষারোপ নিয়ে এনসিপি নেতার প্রতিবাদ

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫, ৫:২৩ অপরাহ্ণ
সাম্য হত্যাকাণ্ডে প্রশাসনের দোষারোপ নিয়ে এনসিপি নেতার প্রতিবাদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক আলোচিত সাম্য হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম সামাজিক মাধ্যমে এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ফেসবুকে দেওয়া দীর্ঘ এক পোস্টে তিনি এ হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে চলমান দোষারোপের প্রবণতাকে ‘সত্য আড়াল করার অপচেষ্টা’ বলে অভিহিত করেন।

সারজিস আলম তার পোস্টে লিখেছেন, সাম্য হত্যাকাণ্ডের পর যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও প্রক্টরের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা চলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার কৌশলমাত্র। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে, যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বের আওতায় পড়ে না। বরং দীর্ঘদিন ধরে সেখানে মাদক ব্যবসা, হেনস্তা ও চাঁদাবাজির মতো কর্মকাণ্ড চলে আসছে, যেগুলোর পেছনে ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ কিছু সিন্ডিকেট ও সংগঠনের ভূমিকা রয়েছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, উদ্যানজুড়ে ভাসমান দোকান দিয়ে বস্তির মতো পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, যার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো হাত নেই। এসব দোকান বসানো ও চাঁদা আদায়ের সঙ্গে যুক্ত কিছু নেতাকর্মী ও প্রভাবশালী মহল এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যের সম্পৃক্ততার অভিযোগও তোলেন তিনি। প্রশাসন যখন এসব উচ্ছেদের চেষ্টা করে, তখন বাধার সম্মুখীন হতে হয়।

সারজিস আলম শহীদ মিনার ও মেট্রোরেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা দোকান ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যারা মাদক সরবরাহ করে ও অবৈধভাবে অর্থ আদায় করে, তারাও পরোক্ষভাবে সাম্য হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। টিএসসি এলাকায় তার নিজ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, এটি এখন শুধুই আড্ডা ও চা-সিগারেটের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ক্যাফেটেরিয়াগুলো কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। অথচ যখনই এগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন কিছু তথাকথিত উদারপন্থী শিক্ষার্থী ও শিক্ষক প্রতিবাদে নেমে পড়েন।

দোয়েল চত্বর ঘিরে গড়ে ওঠা গাছ ও কারুশিল্পের দোকানগুলোকেও তিনি বহিরাগতদের আনাগোনার উৎস হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং বলেন, এসব দোকান থেকে অবৈধভাবে বিপুল অঙ্কের চাঁদা আদায় করা হয়, যা পরিবেশ এবং নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এসব চাঁদাবাজদের পরিচয় প্রকাশের দাবি তোলেন তিনি।

পোস্টের শেষাংশে তিনি কড়া ভাষায় লেখেন, নিজেরা মাদক ব্যবসা করব, দোকান বসাব, বহিরাগতদের আনব আর কিছু ঘটলেই প্রশাসনের পদত্যাগ দাবি করব—এমন দ্বিচারিতা চলতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সব ভাসমান দোকান উচ্ছেদ, ক্যাম্পাসে অবাধ যান চলাচল ও বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ, টিএসসির দোকান বন্ধ করে ক্যাফেটেরিয়া সচলকরণ এবং শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট ভবনগুলোতে খাবারের ব্যবস্থা চালুর মতো জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে তিনি সাম্য হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান, যেন ভবিষ্যতে আর কোনো শিক্ষার্থীকে এমন করুণ পরিণতির শিকার হতে না হয়।