দুই লাখ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, ‘লুটের টাকা ব্যবস্থাপনা তহবিল’ গঠনের ঘোষণা

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫, ৬:৩৫ অপরাহ্ণ
দুই লাখ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, ‘লুটের টাকা ব্যবস্থাপনা তহবিল’ গঠনের ঘোষণা

লুটপাট ও অর্থপাচারের অভিযোগে শেখ পরিবারসহ দেশের ১০টি প্রভাবশালী শিল্পগোষ্ঠীর প্রায় পৌনে দুই লাখ কোটি টাকার অর্থ ও সম্পদ জব্দ করেছে সরকার। এই জব্দকৃত অর্থ দিয়ে ‘লুটের টাকা ব্যবস্থাপনা তহবিল’ গঠন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

সোমবার (১৯ মে) পাচারকৃত টাকা ফেরত আনার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

শীর্ষে শেখ পরিবার ও এস আলম গ্রুপ

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের পাশাপাশি ১০টি শিল্পগোষ্ঠীর এক লাখ ৩০ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ৪২ হাজার ৬১৪ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি এবং বিদেশে পাচারকৃত ২৫৩ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ও পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে।

সরকার গঠিত ১১টি তদন্ত দলের অনুসন্ধানে ব্যাংক ঋণে অনিয়ম, কর ফাঁকি, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের একাধিক অভিযোগ উঠে আসে। ইতোমধ্যে এসব ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং একটি বিশেষ অধ্যাদেশ প্রণয়নের কাজ চলছে।

দুটি পৃথক তহবিল গঠনের পরিকল্পনা

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, এই অর্থ দিয়ে দুটি তহবিল গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে—
১. ব্যাংক ক্ষতিপূরণ তহবিল
২. জনহিতকর কাজের তহবিল

তিনি বলেন, “ব্যাংকগুলো লুটের কারণে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাদের জন্য একটি ফান্ড গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আর যে অর্থ সরাসরি দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত, সেটি জনকল্যাণমূলক খাতে ব্যয় করা হবে। সবকিছুই হবে আদালতের নির্দেশ ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।”

আন্তর্জাতিক সহায়তা ও বিদেশি সম্পদ ফ্রিজ করার উদ্যোগ

আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, “আমাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অনুসরণ করে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে। এটি সাধারণত ৪-৫ বছর সময় নেয়। তবে বিদেশে সম্পদ ফ্রিজ করার মতো তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।”

এই কাজে সহায়তা করছে বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে গঠিত পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দল। ইতোমধ্যে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স (MLA) কাঠামোর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশকে আইনি অনুরোধ পাঠানো হয়েছে।

সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও আইনি প্রক্রিয়ার অঙ্গীকার

সবশেষে বলা হয়, জব্দকৃত অর্থের ব্যবস্থাপনা, পুনরুদ্ধার এবং ব্যয়ের প্রতিটি ধাপ হবে আইনি ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। সরকার চাইছে, এই তহবিলের মাধ্যমে জনগণের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে দেওয়া এবং ভবিষ্যতে দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর বার্তা দেওয়া।