বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্ট সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ চিঠি

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: বুধবার, ২১ মে, ২০২৫, ৬:১০ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্ট সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ চিঠি

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের ৪১ জন সিনেটর ও এমপি। চিঠিতে তারা তিনটি প্রধান ইস্যু তুলে ধরেছেন—তাৎক্ষণিকভাবে একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা, জুলাই বিপ্লবের সময় সহিংসতার শিকারদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ভেঙে ফেলা। তারা মনে করেন, এই বিষয়ে বিলম্ব বা অস্পষ্টতা জনসাধারণের মধ্যে অবিশ্বাস আরও গভীর করবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলবে।

বুধবার (২১ মে) ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানো চিঠিতে অস্ট্রেলিয়ান এমপি ও সিনেটররা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে একটি স্বচ্ছ ও সময়ভিত্তিক নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানান। তারা বলেন, গত বছরের জুলাই বিপ্লবে বাংলাদেশের জনগণ যে সাহসিকতা দেখিয়েছে, তা প্রশাসনের জন্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জনআস্থা পুনর্গঠনের একটি ঐতিহাসিক সুযোগ। এই রোডম্যাপ যেন সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করে এবং ২০২৫ সালের মধ্যেই ঘোষণা করা হয়—এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তারা।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের গত তিনটি নির্বাচনেই গণতান্ত্রিক বৈধতার ঘাটতি ছিল। নির্বাচনী অখণ্ডতা পুনরুদ্ধার এবং শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান। জুলাই বিপ্লবের সময় নিহত ও আহতদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাও অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন তারা। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, বিপ্লবের সময় সহিংসতায় হাজারো মানুষ আহত ও নিহত হয়েছেন, যার স্বচ্ছ তদন্ত ও বিচার হওয়া উচিত।

র‍্যাব বিলুপ্তি প্রসঙ্গে তারা উল্লেখ করেন, এই বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও নির্যাতনের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্যমতে, ২০০৯ সাল থেকে র‍্যাবের হাতে ২,৬৯৯ জনেরও বেশি মানুষ বেআইনিভাবে নিহত হয়েছেন। এ বাহিনী রাজনৈতিক বিরোধীদের টার্গেট করত এবং দায়মুক্তির সুযোগে কাজ করেছে। চিঠিতে তারা র‍্যাব ভেঙে ফেলার পাশাপাশি নির্যাতিতদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তারা র‍্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রশংসা করে অস্ট্রেলিয়ান সরকারকেও একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেন।

চিঠির শেষে তারা সতর্ক করে বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেরি বা অস্পষ্টতা দেশের গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলবে। জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই প্রক্রিয়াকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তাই দ্রুত ও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে প্রস্তুত থাকার কথা জানান।