সরকার চালু করবে ‘ভূমি মালিকানা সনদ’, জুলাই থেকে শুরু হবে ভূমি ব্যবস্থাপনার অটোমেশন
সরকার খুব শিগগিরই ভূমির মালিকানা প্রমাণের জন্য বিভিন্ন দলিলপত্রের বদলে একটি একক ‘ভূমি মালিকানা সনদ’ বা ‘সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ওনারশিপ’ চালু করতে যাচ্ছে। পাশাপাশি, আগামী জুলাই থেকে দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণরূপে স্বয়ংক্রিয় (অটোমেশন) করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. এমদাদুল হক চৌধুরী জানান, জুলাই থেকে সারাদেশে অনলাইনে ভূমির সেবাসমূহ পাওয়া যাবে। ভূমি মিউটেশন, পরচা, ম্যাপ এবং ভূমি সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন সেবা অনলাইনে মিলবে। এই অটোমেশন প্রকল্পের ১৬তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় বাড়িয়ে জনবান্ধব করার চেষ্টা চলছে।
ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্পের আওতায় মোট ১৭টি সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এসব সেবা ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার তৈরি করা হবে, যার মাধ্যমে ই-মিউটেশন, মামলা ব্যবস্থাপনা, অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর, ডিজিটাল ল্যান্ড রেকর্ড, মৌজা ম্যাপ ডেলিভারি, কৃষি ও অকৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা, জলমহাল ও বালুমহাল ব্যবস্থাপনা, ভূমি অধিগ্রহণ, অভ্যন্তরীণ বাজেট ব্যবস্থা ইত্যাদি সহজে পরিচালিত হবে। ‘ল্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস ফ্রেমওয়ার্ক’ সফটওয়্যারটি সরকারের অন্যান্য সেবার সঙ্গে আন্তঃপরিচালনাযোগ্য ডাটাবেজ তৈরির মাধ্যমে একযোগে কাজ করবে।
এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ কোটি ৮ লক্ষ জন ভূমি উন্নয়ন কর দিতে নিবন্ধন করেছেন এবং তিন কোটি জমির তথ্য ডিজিটালে রূপান্তরিত হয়েছে। এর ফলে প্রায় ৭০ শতাংশ নাগরিক স্বচ্ছভাবে কর পরিশোধ করেছেন, এবং অন্তত ৫০ শতাংশ নাগরিকের হয়রানি কমেছে। প্রতিদিন ৩০-৪০ লাখ টাকা তাৎক্ষণিকভাবে সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে।
অটোমেশন প্রকল্পের ফলে ভূমি রাজস্ব মামলা ব্যবস্থাপনাও উন্নত হবে, যেখানে সব অভ্যন্তরীণ মামলা একই প্ল্যাটফর্মে পরিচালনা এবং অনলাইনে মামলা পর্যবেক্ষণ ও সুপারভাইজ করা সম্ভব হবে। এছাড়া জনবহুল স্থানে ভূমি সেবা কিয়স্ক স্থাপন করা হচ্ছে, যেখান থেকে নাগরিকরা জমির খতিয়ান, ম্যাপ প্রিন্ট করতে পারবেন এবং ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে পারবেন।
সরকার মনে করছে, দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ ফৌজদারি মামলার পেছনে জমিজমা বিরোধের কারণ রয়েছে এবং ভূমি ব্যবস্থাপনার অটোমেশনই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।
২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে সফটওয়্যার ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য প্রায় ৯১৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে। সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে ৫ হাজার ২৪৭টি ভূমি অফিসে একযোগে অনলাইন সেবা চালু করা সম্ভব হবে এবং প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার সরবরাহ এবং জনবল প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন