কাশ্মিরে নতুন উত্তেজনা

দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মির নিয়ে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব থাকলেও, সম্প্রতি পেহেলগামে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। যদিও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রাহ্মনিয়াম জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, এই হামলার সঙ্গে কাশ্মির দ্বন্দ্বের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। বার্লিনে একটি থিঙ্কট্যাঙ্ক সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পেহেলগামের হামলাটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত সন্ত্রাসী আক্রমণ, যার উদ্দেশ্য ছিল জম্মু-কাশ্মিরের পর্যটন শিল্পকে ধ্বংস করা এবং ধর্মীয় বিভেদকে উসকে দেওয়া।

গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মিরের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে হত্যা করে। নিহতদের সবাই পুরুষ এবং অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন। এই হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামের একটি জঙ্গিগোষ্ঠী, যা পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরভিত্তিক লস্কর-ই তৈয়বার একটি শাখা হিসেবে চিহ্নিত।

এই ঘটনার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিকভাবে কয়েকটি কঠোর পদক্ষেপ নেয়, যার মধ্যে রয়েছে সিন্ধু নদীর পানি বণ্টনচুক্তি পর্যালোচনা এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল। পাল্টা জবাবে পাকিস্তানও ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধসহ নানা প্রতিক্রিয়া জানায়।

উত্তেজনার মধ্যেই ৭ মে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান চালায় পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরের বিভিন্ন এলাকায়। এতে ভারত সরকারের তথ্যমতে ৭০ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়, যদিও পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ৫১ জন এবং আহত হয়েছে ৭৮ জন। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ৯ মে পাকিস্তান ‘অপারেশন বুনিয়ান উম মারসুস’ পরিচালনা করে, যেখানে ভারতে অন্তত ৩৬ জন নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ মে থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও, নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে এখনো চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। জয়শঙ্কর তার সাক্ষাৎকারে বলেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে শুধু সহ্যই করে না, বরং রাষ্ট্র পরিচালনার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে। তিনি আরও জানান, ‘অপারেশন সিঁদুর’ কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়, বরং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে, যারা ভারতের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে। ভারতের লক্ষ্য হলো পেহেলগামের হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনা এবং কাশ্মিরে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা।