‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি—সচিবালয়ে দ্বিতীয় দিনের আন্দোলন

সরকার সোমবার (২৬ মে) সন্ধ্যায় ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছে। এর প্রতিবাদে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা আজ টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তাঁরা এ অধ্যাদেশকে ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যা দিয়ে তা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন চলছে। সংশোধিত এই অধ্যাদেশটি ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’-এর পরিবর্তে গৃহীত হয়েছে এবং গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
কর্মচারীদের অভিযোগ, এ অধ্যাদেশে সাড়ে চার দশক আগের কিছু ‘নিবর্তনমূলক ধারা’ পুনরায় সংযোজন করে সরকারি চাকরিজীবীদের অধিকার হরণ করা হয়েছে। এতে চারটি বিষয়কে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে—
১. কোনো সরকারি কর্মচারীর অনানুগত্যমূলক কাজ করা বা অন্যদের এমন কাজে প্ররোচিত করা।
২. একক বা সমবেতভাবে ছুটি ছাড়া কর্মস্থল থেকে অনুপস্থিত থাকা।
৩. অন্য কর্মচারীকে কর্মে অনুপস্থিত থাকার জন্য উসকানি বা প্ররোচনা দেওয়া।
৪. কারও কর্তব্যপালনে বাধা দেওয়া।
এই অপরাধগুলোর শাস্তি হিসেবে কর্মচারীদের পদাবনতি, বরখাস্ত বা চাকরি থেকে অপসারণের বিধান রাখা হয়েছে। সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হলো, এ অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিভাগীয় মামলা ছাড়াই সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। অভিযোগ গঠনের সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাত কর্মদিবসের মধ্যে দণ্ডাদেশ দেওয়া যাবে।
এছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মচারী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে আপিল করতে পারবেন, তবে রাষ্ট্রপতির দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রাখা হয়নি—শুধুমাত্র পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করা যাবে।
আন্দোলনকারী কর্মচারীরা বলছেন, এই অধ্যাদেশ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং এটি সরকারি চাকরিজীবীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা হরণ করবে। তাই তারা সরকারের কাছে অবিলম্বে এই অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন