জম্মু ও কাশ্মির দ্বন্দ্ব এবং পেহেলগাম হামলার প্রসঙ্গ: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য

দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মিরের দখল নিয়ে দীর্ঘ ৭ দশকের বেশি সময় ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রাহ্মনিয়াম জয়শঙ্কর বলেছেন, পেহেলগামে সাম্প্রতিক হামলার সঙ্গে এই দ্বন্দ্বের কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই।
শনিবার বার্লিনে জার্মান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জয়শঙ্কর জানান, পেহেলগামে সংঘটিত হামলা ছিল একটি সন্ত্রাসী ঘটনা, যার উদ্দেশ্য ছিল মানুষের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি এবং জম্মু-কাশ্মিরের পর্যটন খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করা, যা ওই রাজ্যের প্রধান অর্থনৈতিক ক্ষেত্র। পাশাপাশি, এই হামলার মাধ্যমে ভারতের ভেতরে ধর্মীয় বিভেদের রাজনীতি উসকে দেওয়া হয়েছিল।
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় এক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে ২৬ জন পর্যটককে হত্যা করে। নিহতদের সবাই পুরুষ এবং অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামক একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এটি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরভিত্তিক লস্কর-ই তৈয়বার একটি শাখা।
এ ঘটনার পর ভারত সিন্ধু নদের পানি বণ্টনচুক্তি বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়, যার জবাবে পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে আকাশসীমা বন্ধ এবং ভিসা বাতিল করে।
এই উত্তেজনার মাঝে ৭ মে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান চালায়, যাতে তারা পাকিস্তানি সন্ত্রাসীদের বেশ কিছু ঘাঁটি ধ্বংস করে এবং বেশ কিছু সন্ত্রাসী নিহত হয়। পাকিস্তান এই অভিযানের পাল্টা হিসেবে ৯ মে ‘অপারেশন বুনিয়ান উম মারসুস’ পরিচালনা করে, যেখানে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীরও অনেক সদস্য নিহত হন।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ মে থেকে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও এখনো উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে।
সাক্ষাৎকারে জয়শঙ্কর আরও বলেন, “বিশ্বের কোনো দেশ সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্র পরিচালনার একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। অপারেশন সিঁদুরের উদ্দেশ্য পাকিস্তানে হামলা চালানো নয়, বরং সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল ধ্বংস করা এবং হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা।”
আপনার মতামত লিখুন