কোরবানির ঈদ ঘিরে চুয়াডাঙ্গায় হাজার কোটি টাকার পশুর বাজার

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫, ৩:৫৩ অপরাহ্ণ
কোরবানির ঈদ ঘিরে চুয়াডাঙ্গায় হাজার কোটি টাকার পশুর বাজার

আসন্ন কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে চুয়াডাঙ্গায় গড়ে উঠেছে প্রায় হাজার কোটি টাকার পশুর বাজার। জেলার প্রান্তিক কৃষক ও খামারিরা স্থানীয় চাহিদার তুলনায় ৭৪ হাজার ৫৮১টি অতিরিক্ত কোরবানির পশু প্রস্তুত করেছেন, যেগুলো দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হবে। জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর চুয়াডাঙ্গায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩৬টি গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া, যেখানে জেলার অভ্যন্তরীণ চাহিদা ১ লাখ ২৪ হাজার ৮৫৫টি। অর্থাৎ, প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি পশু উৎপাদন হয়েছে।

কৃষক ও খামারিরা বলছেন, গরুর গড় সাইজ গত বছরের তুলনায় বড় হলেও উৎপাদন খরচও বেড়েছে। দাম নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা ভালো, ফলে অনেক গরু আগেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। দামুড়হুদার কৃষক মোতালেব হোসেন জানান, গরু বড় হয়েছে, খরচও বেশি, তবে এখনো দাম নিশ্চিত নয়, যা কিছুটা দুশ্চিন্তার কারণ। জীবননগরের খামারি লাল জানান, তার ১৫টি গরুর মধ্যে ৮টি ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে এবং লাভও ভালো হচ্ছে। প্রথমবার খামার করছেন এমন অনেকেই আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। নবীন খামারি জাহিদুল বলেন, তিনি চারটি গরু হাটে তুলেছেন এবং ভালো সাড়া পাচ্ছেন।

চুয়াডাঙ্গার অন্যতম বড় খামার ‘আস্থা এগ্রো অ্যান্ড ডেইরি ফার্ম’-এর মালিক অনিক বিশ্বাস জানান, তারা আড়াইশ গরু প্রস্তুত করেছেন, যার মধ্যে ২০০টি ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। ঢাকার গাবতলী হাটে কিছু বড় সাইজের গরু পাঠানো হবে। তিনি আরও জানান, তাদের খামারে ১০-১২ লাখ টাকার গরুও রয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় ৮টি কোরবানির পশুর হাটের পাশাপাশি এবার অনলাইনেও পশু বিক্রি হচ্ছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাহাবুদ্দিন জানিয়েছেন, বিদেশি পশু না থাকায় দেশীয় খামারিরা এবার ন্যায্য দাম পাচ্ছেন এবং অনলাইন বিক্রিতেও ভালো সাড়া মিলছে।

গরু কেনার পর কীভাবে দেখাশোনা করতে হবে সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. শামীমুজ্জামান। তিনি বলেন, নতুন কেনা গরুকে হঠাৎ দানাদার খাবার না দিয়ে কাঁচা ঘাস, বিচালি ও স্যালাইন খাওয়ানো উচিত। গরুকে ঠান্ডা স্থানে রেখে নিয়মিত গোসল করানো প্রয়োজন।

অর্থনীতিবিদদের মতে, চুয়াডাঙ্গার এই বিপুল পশু উৎপাদন ও বেচাকেনা জেলার গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে। প্রাণিসম্পদ, খামার উপকরণ, পরিবহন, পশুর খাদ্যসহ বিভিন্ন খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সামগ্রিকভাবে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।