জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ৩৭ বছরের গৌরবময় নেতৃত্ব

বিশ্ব শান্তিরক্ষায় জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ৩৭ বছর পূর্ণ হয়েছে। ১৯৮৮ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় সামরিক পর্যবেক্ষক পাঠানোর মাধ্যমে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা এখন এক গর্বিত ইতিহাসে রূপ নিয়েছে।

জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শান্তিরক্ষী প্রেরণে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে ৫,২৩০ জন শান্তিরক্ষী, যার মধ্যে ৪৪৭ জন নারী, জাতিসংঘের মিশনে নিয়োজিত রয়েছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে নেপাল (৫,৩৫০) ও রুয়ান্ডা (৫,২৩৭)।

আইএসপিআরের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ৬৩টি মিশনে অংশ নিয়েছে, যেখানে ২,৫৮,০০০ শান্তিরক্ষী, তার মধ্যে ৩,৬৪৫ জন নারী, দায়িত্ব পালন করেছেন। দুঃখজনকভাবে ১৬৮ জন শহীদ এবং ২৭২ জন আহত হয়েছেন। চলতি বছরে দুই আহত শান্তিরক্ষীকে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে।

বাহিনীগুলোর অবদান:

• নৌবাহিনী: ২০১০ সালে প্রথমবার যুদ্ধজাহাজ পাঠায়। বর্তমানে ‘সংগ্রাম’ জাহাজ লেবাননে মেরিটাইম টাস্কফোর্সে কাজ করছে। দক্ষিণ সুদানে ২০১৫ সাল থেকে স্পেশাল ফোর্স কন্টিনজেন্ট কাজ করছে।
• বিমানবাহিনী: কঙ্গোতে ৬টি হেলিকপ্টার, সি-১৩০ পরিবহন বিমান এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে ৩টি হেলিকপ্টার নিয়ে কাজ করছে।
• পুলিশ: এ পর্যন্ত ২১,৮১৫ জন পুলিশ, তার মধ্যে ১,৯২৭ নারী, শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করেছেন। বর্তমানে ১৯৯ জন কর্মরত, যার মধ্যে ৭১ জন নারী।

আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উদযাপন:

২৯ মে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে ‘শান্তিরক্ষী দৌড়-র‌্যালি ২০২৫’ আয়োজনের মাধ্যমে দিনটির সূচনা হয়।
প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এরপর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনা ও বিশেষ উপস্থাপনা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলী, কূটনীতিক, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, বাহিনীর প্রধান ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণ শুধু কূটনৈতিক অর্জন নয়, এটি বাংলাদেশের সামরিক দক্ষতা, আন্তর্জাতিক দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্বের প্রতীক। এ অবদান বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও উজ্জ্বল করেছে।

দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় দৈনিকগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র, টেলিভিশনে টক শো ও প্রামাণ্যচিত্র সম্প্রচারিত হচ্ছে।