রংপুরে জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলা, উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন

রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে নগরীর সেনপাড়া এলাকার স্কাইভিউ বাসভবনে এ হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা বাড়িতে ইট-পাটকেল ছুড়ে জানালার কাচ ভাঙচুর করে এবং একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। ঘটনার পরপরই জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এর আগে বিকেলে রংপুরে পৌঁছান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি সেনপাড়ায় নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়ে মতবিনিময় করেন। এই অবস্থানকে ঘিরেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করে। সন্ধ্যায় তারা প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের দাবি ও জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের আহ্বান জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভ মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে এসে অবস্থান নেয় এবং পরে স্কাইভিউ বাসভবনের দিকে রওনা দেয়। সেখানেই সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে এবং জাতীয় পার্টির কর্মীরা সেনপাড়ায় অবস্থান নেয়। পুলিশ আধা ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে এবং শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রাত পৌনে ১০টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা টাউনহলের দিকে অবস্থান নেয়, অন্যদিকে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়।
এ ঘটনায় জাতীয় পার্টির মহানগর সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির অভিযোগ করে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপিসহ কয়েকটি দলের নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে চেয়ারম্যানের বাসভবনে হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা সুস্থ ধারার রাজনীতি করি, কিন্তু যারা আজ আগুন জ্বালালেন, সেটি সহজে নেভানো যাবে না।” জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাও বলেন, “দেশে আইনশৃঙ্খলা নেই বলেই এ ধরনের হামলা ঘটছে। এখন কেউ চাইলেই জড়ো হয়ে সহিংসতা চালাচ্ছে।” তিনি জানান, হামলার সময় জিএম কাদের বাসভবনেই অবস্থান করছিলেন।
অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে অভিযোগ করেন, তাদের বিক্ষোভ মিছিলে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে হামলা চালানো হয়েছে এবং সবাইকে টাউনহলে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান। ঘটনার পর রংপুর শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনীর টহল বাড়ানো হয়েছে। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
আপনার মতামত লিখুন