তরুণদের ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগেই সম্ভব জলবায়ু সংকট মোকাবিলা: উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, তরুণদের লোভ, ক্ষমতার মোহ ও দুর্নীতির প্রলোভন থেকে দূরে থেকে দেশের পরিবেশ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। শনিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে ‘ম্যানিফেস্টো টক: ইয়ুথ, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ক্লাইমেট’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত ১৬টি সংগঠনের সমন্বয়ে ইয়ুথ ক্লাইমেট কোয়ালিশন–এর উদ্বোধন করা হয়।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা উন্নয়ন চাই, তবে তা যেন প্রকৃতিকে ধ্বংস করে না হয়। জলাশয় ভরাট, পাহাড় কাটা কিংবা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। সরকার পরিবেশ রক্ষায় ইতিমধ্যে তিনটি বড় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে—পুরনো বাস অপসারণ, ইলেকট্রিক যানবাহনের প্রচলন এবং ঢাকার চারপাশে নতুন ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধকরণ। তিনি বলেন, এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে নাগরিক সমাজকেও সম্পৃক্ত হতে হবে। বাজারে যাওয়ার সময় কাপড় বা পাটের ব্যাগ ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পলিথিন বন্ধে সচেতনতার পাশাপাশি আইন প্রয়োগও জরুরি।
তিনি আরও জানান, ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তিনটি মডেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা, টেকসই ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু করাও অত্যন্ত জরুরি। আমিনবাজার ও মাতুয়াইলের বর্জ্যের স্তূপ থেকে সৃষ্ট আগুন জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি তৈরি করছে, যা বিশেষভাবে ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
উন্নয়নের নামে গাছ কাটা বন্ধ করার কথাও জোর দিয়ে বলেন উপদেষ্টা। তিনি জানান, বন বিভাগ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর মিলে ঢাকার জাদুঘরের নকশা পরিবর্তন করে পুরোনো গাছ রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে, যা একটি আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ। এছাড়াও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং পরিবেশবান্ধব দেশীয় গাছ লাগানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল হক, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা নিজেদের দলের পক্ষ থেকে পরিবেশ ও জলবায়ু ইস্যুতে অবস্থান তুলে ধরেন এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহারে এই বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আশ্বাস দেন।
আপনার মতামত লিখুন