নতুন ফ্যাসিবাদের আগমনধ্বনিতে সতর্ক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: শনিবার, ৩১ মে, ২০২৫, ২:২১ অপরাহ্ণ
নতুন ফ্যাসিবাদের আগমনধ্বনিতে সতর্ক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ

নতুন ফ্যাসিবাদের আগমনধ্বনি শোনা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সমাজের ভেতরে একটি নতুন ধরনের ফ্যাসিবাদী শক্তির নড়াচড়া স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ। এ ধরনের অবস্থার বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘নাগরিক সংহতি সমাবেশ’-এ বক্তব্য দেন তিনি। সমাবেশটি আয়োজন করা হয় যুদ্ধাপরাধী এ টি এম আজহারুল ইসলামকে দায়মুক্তি দেওয়া এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মিছিলে জামায়াত-শিবিরের হামলার প্রতিবাদে। সমাবেশের আয়োজক ছিল গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।

বক্তব্যে আনু মুহাম্মদ বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের যে প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল, সেখানে জনগণ একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু বাস্তবে সরকার নির্লিপ্ত, কোথাও তাদের কার্যকর উপস্থিতি নেই। বরং অনেক ক্ষেত্রে হামলা-নির্যাতনের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সম্পৃক্ততা লক্ষ করা যাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, যখন নারী, শিক্ষার্থী, শ্রমিক বা শিক্ষকরা নিজেদের অধিকার আদায়ের চেষ্টা করেন, তখনই তাঁদের ওপর হামলা হয় এবং হামলাকারীরা রক্ষা পায় কারণ সরকারের মধ্যেই তাদের পৃষ্ঠপোষক রয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন, ২৭ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের শান্তিপূর্ণ মিছিলে এবং ২৮ মে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে হামলা চালানো হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, শাহবাগবিরোধী ঐক্যের ব্যানারে জামায়াত-শিবিরের বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মীরা এই হামলায় জড়িত ছিল, পুলিশের উপস্থিতিতেও।

যুদ্ধাপরাধী এ টি এম আজহারুল ইসলামকে দায়মুক্তি দেওয়ার বিরোধিতা করে আনু মুহাম্মদ বলেন, তিনি ১৯৭১ সালের একটি স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধী সংগঠনের নেতা ছিলেন, এবং তাঁর বিরুদ্ধে দলিল–প্রমাণভিত্তিক অভিযোগ ছিল। আদালতের কোনো ত্রুটিতে আগের রায় বাতিল হলেও তাঁর অপরাধের ঐতিহাসিক সত্যতা মুছে যায় না। এমন একজন যুদ্ধাপরাধীকে নির্দোষ ঘোষণা করা ইতিহাস বিকৃতির নামান্তর, যা মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, নির্যাতিত নারী ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি চরম অবমাননা।

তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে ইসলামবিরোধী বলে প্রচার করাও একটি ভয়ংকর মিথ্যাচার। কারণ ১৯৭১ সালে শহীদ হওয়া অধিকাংশ মানুষ ছিলেন ধার্মিক মুসলমান। তাঁদের হত্যাকারীদের বিচারকে ইসলামবিরোধী বললে, প্রকৃতপক্ষে ইসলামকেই অপমান করা হয়।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ইতিহাস বিকৃতি, বৈষম্য ও নিপীড়নের রাজনীতির বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যতদিন যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি চলবে, ততদিন গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং বৈষম্যহীন, মানবিক বাংলাদেশের সংগ্রাম চলবে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হারুন উর রশীদ এবং গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মানজুর আল মতিন। প্রবল বৃষ্টির কারণে অনুষ্ঠান সংক্ষেপ করতে হয়। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক জাবির আহমেদ।