পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে যুদ্ধবিমান হারানোর বিষয় স্বীকার করলো ভারত

অবশেষে পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সামরিক সংঘাতে যুদ্ধবিমান হারানোর বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছেন ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান। শনিবার সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত শাংরিলা ডায়লগে ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমরা কতটি বিমান হারিয়েছি তা মুখ্য নয়, বরং কী ভুল হয়েছিল এবং কেন হয়েছিল, তা বিশ্লেষণ করাই আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

যদিও পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী তারা ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, জেনারেল চৌহান সেটিকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে ভারত ঠিক কতগুলো বিমান হারিয়েছে, সে বিষয়ে তিনি নির্দিষ্টভাবে কিছু বলেননি। তিনি জানান, যেসব ভুল হয়েছিল তা চিহ্নিত করে দ্রুত সংশোধন করা হয়েছে এবং মাত্র দুই দিনের মধ্যেই ভারত আবার আকাশে সব যুদ্ধবিমান প্রস্তুত করে হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে।

এই প্রথমবারের মতো ভারতীয় পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে যুদ্ধবিমান হারানোর বিষয়টি স্বীকার করা হলো। এর আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ দাবি করেছিলেন, পাকিস্তান ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। যদিও এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই হয়নি এবং ভারত সরকার এতদিন বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি।

প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে একটি সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। ভারত একে পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে অভিহিত করে, যদিও ইসলামাবাদ সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। বিমান, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাশাপাশি সীমান্তে গুলিবিনিময়ের ঘটনাও ঘটেছে। এমন উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য ছিল, যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু যুদ্ধ এড়াতে ভূমিকা রেখেছে। তবে এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন জেনারেল চৌহান। তিনি বলেন, আমরা কখনোই পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাইনি—এই ধারণা বাস্তবতার থেকে অনেক দূরে।

তিনি আরও জানান, পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগের পথ সবসময় খোলা ছিল এবং উত্তেজনা প্রশমনের জন্য বিভিন্ন বিকল্প পথও বিদ্যমান রয়েছে। পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে যে অস্ত্র পাকিস্তান পেয়েছে, সেগুলোর কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়নি। তবে ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, সংঘাত চলাকালীন চীন পাকিস্তানকে বিমান প্রতিরক্ষা ও স্যাটেলাইট সহায়তা দিয়েছে।

জেনারেল চৌহান আরও জানান, ভারত পাকিস্তানের সুরক্ষিত ঘাঁটির ৩০০ কিলোমিটার ভেতরে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে হামলা চালাতে পেরেছে। বর্তমানে যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে, তবে এর ভবিষ্যৎ পাকিস্তানের আচরণের ওপর নির্ভর করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তাঁর ভাষায়, “আমরা আমাদের স্পষ্ট লাল দাগ টেনে দিয়েছি।”

এদিকে বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, পাকিস্তান চীনা প্রযুক্তিনির্ভর যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতের পাঁচটি বিমান ভূপাতিত করেছে। তিনি রাফায়েল যুদ্ধবিমানের কার্যকারিতা এবং চুক্তির স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো জবাবদিহিতা নেই বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তার এই বক্তব্য দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।