ফিলিস্তিনপন্থী বক্তব্যের জেরে এমআইটির সমাপনী অনুষ্ঠান থেকে বাদ মেঘা ভেমুরি

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন শিক্ষার্থী মেঘা ভেমুরিকে তাদের স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান থেকে নিষিদ্ধ করেছে। ফিলিস্তিনের পক্ষে বক্তব্য দেওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

মেঘা ভেমুরি এমআইটির ২০২৫ ব্যাচের সভাপতি এবং সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান (মার্শাল) হিসেবে তার অংশগ্রহণের কথা ছিল। তবে বৃহস্পতিবারের এক প্রতিবাদমূলক বক্তব্যের পর তাকে ওই অনুষ্ঠানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মেলিসা নোবেলস এক ই-মেইলে জানান, মেঘা ও তার পরিবারকে স্নাতক অনুষ্ঠানের দিন পুরো সময়ের জন্য ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ রাখা হবে। তিনি অভিযোগ করেন, “মেঘা পরিকল্পিতভাবে এবং বারবার অনুষ্ঠান আয়োজকদের বিভ্রান্ত করেছেন।”

উপাচার্য আরও বলেন, “আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সম্মান করি, কিন্তু স্নাতক অনুষ্ঠানের মতো গুরুত্বপূর্ণ এক আয়োজনে তিনি মঞ্চে প্রতিবাদ করে আমাদের নির্ধারিত নিয়ম ও প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করেছেন।”

মেঘা ভেমুরির বক্তব্য

লাল কেফিয়েহ পরে মঞ্চে ওঠেন মেঘা, যা ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থনের প্রতীক। বক্তব্যে তিনি গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, “এমআইটি একটি বিদেশি সামরিক বাহিনীর, অর্থাৎ ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে গবেষণায় অংশ নিচ্ছে। এর অর্থ, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের আক্রমণে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও জড়িত।”

মেঘা আরও বলেন, “ইসরায়েল যেভাবে ফিলিস্তিনকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলতে চাইছে, তা লজ্জাজনক। আর এমআইটি সেই চেষ্টার অংশীদার হয়ে উঠছে।”

তিনি উল্লেখ করেন, “গত বসন্তে এমআইটির আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও গ্র্যাজুয়েট ছাত্র ইউনিয়ন ভোট দিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের আহ্বান জানিয়েছিল। শিক্ষার্থীরা গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছিলেন এবং যাঁরা ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।”

কে এই মেঘা ভেমুরি?

মেঘা ভেমুরির জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আলফারেটা শহরে। তিনি ২০২১ সালে আলফারেটা হাইস্কুল থেকে স্নাতক হয়ে এমআইটিতে ভর্তি হন। সেখানে তিনি কম্পিউটার সায়েন্স, নিউরোসায়েন্স এবং ভাষাতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।

তিনি এমআইটির ছাত্রসংগঠন Written Revolution-এর সদস্য, যা বিপ্লবী চিন্তাধারার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ইউসিটি নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটে গবেষণা সহকারী হিসেবেও কাজ করেছেন।

মেঘা ভেমুরিকে অনুষ্ঠান থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত এমআইটি ক্যাম্পাসে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বনাম প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কানুন—এই দ্বন্দ্বে শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।