বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রথম মনোরেল প্রকল্প: নাগরিক জীবনে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: সোমবার, ২ জুন, ২০২৫, ৭:২০ অপরাহ্ণ
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রথম মনোরেল প্রকল্প: নাগরিক জীবনে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে দেশের প্রথম মনোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যা নগরীর গণপরিবহন খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনার প্রত্যাশা জাগিয়েছে। মনোরেল চালুর লক্ষ্যে ইতিমধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

রোববার (১ জুন) চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের চেম্বার মিলনায়তনে এই সমঝোতা স্মারক সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী ওরাসকম গ্রুপ ও আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপ প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি করবে এবং অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন সম্পন্ন করবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, শহরটিকে সুন্দর ও পরিকল্পিত করার জন্য আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। যানজট নিরসনের পাশাপাশি স্মার্ট ট্রাফিক সিস্টেম চালু, নতুন বাস টার্মিনাল নির্মাণসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। তবে মনোরেল প্রকল্প এই সমস্যাগুলোর স্থায়ী ও কার্যকর সমাধান হবে।

মেয়র জানান, প্রস্তাবিত মনোরেল প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৪ কিলোমিটার এবং এতে বিনিয়োগ হবে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা। সম্পূর্ণ অর্থায়ন করবে বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ওরাসকম কনস্ট্রাকশন ও আরব কন্ট্রাক্টরস। চসিকের অর্থায়নে কোনো বোঝা পড়বে না, শুধু প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট ও ভূমি বরাদ্দ দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, এই মনোরেল শুধু যানজট কমাবে না, চট্টগ্রামকে পরিবেশবান্ধব, পর্যটন ও ব্যবসাবান্ধব নগরীতে রূপান্তরের পথ সুগম করবে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে সংযোগের আধুনিক সেতুবন্ধ তৈরি করবে।

মেয়র চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকেও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, কক্সবাজারের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে, কারণ নদী ও পাহাড় ঘেরা এই নগরীর উন্নত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থাকা জরুরি।

গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মনোরেল প্রকল্প চট্টগ্রামকে স্মার্ট ও টেকসই নগরীতে পরিণত করার গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও নগরবাসীর অংশগ্রহণে ফোরাম এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করবে।

আরব কন্ট্রাক্টরস ও ওরাসকম পেনিনসুলা কনসোর্টিয়ামের চিফ রিপ্রেজেনটেটিভ কাউসার আলম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হলেও যানজট ও পরিবহন সংকট ক্রমবর্ধমান। মনোরেল আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব সমাধান হিসেবে কার্যকর হবে। প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে বাস্তবায়িত হবে এবং বিনিয়োগ আসবে জার্মানির নাস ইনভেস্টমেন্ট ও মিশরের ন্যাশনাল ব্যাংক অব ইজিপ্ট থেকে।

তিনটি সম্ভাব্য রুট নির্ধারণ করা হয়েছে—

  • লাইন-১: ২৬.৫ কিলোমিটার, কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত (বহদ্দারহাট, চকবাজার, লালখান বাজার, দেওয়ানহাট ও পতেঙ্গা হয়ে)
  • লাইন-২: ১৩.৫ কিলোমিটার, সিটি গেট থেকে শহীদ বশিরুজ্জামান স্কয়ার (একে খান, নিমতলী, সদরঘাট ও ফিরিঙ্গি বাজার হয়ে)
  • লাইন-৩: ১৪.৫ কিলোমিটার, অক্সিজেন থেকে ফিরিঙ্গি বাজার (মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, আন্দরকিল্লা ও কোতোয়ালি হয়ে)

কাউসার আলম বলেন, মনোরেল থেকে রাজস্ব আসবে শুধু টিকিট বিক্রির মাধ্যমে নয়, স্টেশনে বিজ্ঞাপন, দোকানপাট এবং আশপাশের সম্পত্তির মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে। একটি কার্যকর গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে উঠলে ৫ থেকে ৭ গুণ পর্যন্ত অর্থনৈতিক রিটার্ন পাওয়া সম্ভব।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার কামাল, গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরামের সদস্য সচিব নাজির শাহীন প্রমুখ।

২০১৯ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হলেও তা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে মেট্রোরেল না করে মনোরেল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

২০২১ সালে চায়না ভিত্তিক দুই প্রতিষ্ঠান মনোরেল চালুর প্রস্তাব দিয়েছিল, যার মধ্য দিয়ে প্রকল্পটির প্রস্তুতি শুরু হয়।

মনোরেল ব্যবস্থায় ছোট ট্রেনগুলো মাটির উপরে একটি একক রেলপথ ধরে চলবে, যা শহরের যানজট নিরসনে নতুন দিগন্ত খুলবে।