করাচির জেল থেকে ২১৩ কয়েদির পালিয়ে যাওয়া: পাকিস্তানে নজিরবিহীন নিরাপত্তা বিপর্যয়

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫, ৬:৪৯ অপরাহ্ণ
করাচির জেল থেকে ২১৩ কয়েদির পালিয়ে যাওয়া: পাকিস্তানে নজিরবিহীন নিরাপত্তা বিপর্যয়

পাকিস্তানের করাচির একটি কারাগার থেকে ২১৩ জন কয়েদি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চরম নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, সোমবার রাতে একাধিক ভূকম্পনের পর সৃষ্টি হওয়া আতঙ্কের সুযোগ নিয়েই এই পালানোর ঘটনা ঘটে। ভূমিকম্পে কাঁপতে থাকা জেলের দেয়াল ও কাঠামোর ঝুঁকি বিবেচনায় কয়েদিদের নিরাপদে খোলা আঙিনায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। সেই সময়টিকে কাজে লাগিয়েই পালিয়ে যায় বিপুল সংখ্যক বন্দি।

সিন্ধু প্রদেশের আইনমন্ত্রী জিয়াউল হাসান লানজার জানিয়েছেন, মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত চলা এই পালানোর ঘটনাটি ঘটেছে করাচির মালির জেলার একটি কারাগারে। রাত পৌনে ১টার দিকে আনুমানিক দুই হাজার বন্দিকে গণনার জন্য বাইরে আনা হয়। তখনই পালানোর তৎপরতা শুরু হয়। পুলিশের দাবি, কিছু বন্দি কারা কর্মীদের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয় এবং তাদের বাধ্য করে কারাগারের মূল ফটক খুলে দিতে। তবে ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিকাংশ কয়েদি দুর্বল হয়ে পড়া জেলের বাইরের দেয়াল টপকে পালিয়েছে, যা ভূকম্পনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

পালিয়ে যাওয়া কয়েদিদের মধ্যে বেশিরভাগই মাদকাসক্ত বা তুলনামূলকভাবে ছোট অপরাধে জড়িত ছিল বলে জানিয়েছেন সিন্ধুর পুলিশপ্রধান গুলাম নবি মেমন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এরই মধ্যে ৭৮ জন বন্দিকে পুনরায় আটক করে জেলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। গোলাগুলিতে এক কয়েদি নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছেন তিনজন কারাকর্মী। জেলখানার ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে—পরিবারের সঙ্গে বন্দিদের দেখা করার কক্ষে দেখা গেছে ভাঙা কাচ ও ক্ষতিগ্রস্ত ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম।

এই ঘটনা পাকিস্তানের ইতিহাসে অন্যতম বড় কারাবন্দি পালানোর ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলি শাহ এ ঘটনাকে গুরুতর ব্যর্থতা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, কয়েদিদের সেল থেকে বের করে আনা ছিল সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত। পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে তিনি সতর্ক করে বলেন, আত্মসমর্পণ না করলে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হতে পারে।

এ ঘটনায় সরকারের কারা প্রশাসন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে মত বিশ্লেষকদের। এখন দেখার বিষয়, পালিয়ে যাওয়া কয়েদিদের কত দ্রুত ধরে ফেরা সম্ভব হয় এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কতটা কার্যকর পদক্ষেপ নেয় কর্তৃপক্ষ।